আওয়ামী লীগ এর একাংশের সাম্প্রদায়িক চেহারা, উদ্বেগ বাড়ছে
কুমিল্লার হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে শহরের নজরুল এভিনিউতে বিক্ষোভ মিছিল বের করলে যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের কর্মীরা তাদের ধাওয়া দেয়। এই সময় যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের ধাওয়ায় আহত হন বেশ কিছু হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কর্মী। একই সময় ছাত্রলীগ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণা করে। এটি নিয়ে আওয়ামী লীগ এর নীতিনির্ধারক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। ঘটনার সূত্রপাত হয় কুমিল্লার সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন ওরফে বাহার। বাহারের দুর্গাপুজা সম্পর্কে কিছু অবলোকন মন্তব্য নিয়ে। তিনি ধর্মের আচার-নীতির কথা না বলে অন্য ধর্ম অনুসারীদের কিভাবে ধর্মপূজা করবেন সে নিয়ে নাক গলান এবং কিছু সাম্প্রদায়িক বক্তব্য দেন। তার এই বক্তব্য সারা দেশে হিন্দু ধর্মালম্বীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। সকলে এর প্রতিবাদ জানায় এবং এর ফলে এটি উত্তেজনা তৈরি হয়। বাহার এই সময় পূজাকে নিয়ে কেন এ ধরনের মন্তব্য করলেন এই নিয়ে বিভিন্ন স্থানে প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক মহলেও এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানা যায়।
শুধু এটি নয়, আওয়ামী লীগের কিছু নেতাদের মধ্যে ইদানিং সাম্প্রদায়িক চেহারা প্রকাশ্যে বীভৎস আকারে দেখা যাচ্ছে। কয়েকদিন আগে মুন্সিগঞ্জের পৌরসভার মেয়র ফয়সাল বিপ্লব যিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা তিনি সংসদ সদস্য মৃণালকান্তি দাসের উদ্দেশ্যে অশালীন এবং সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করেছেন। তিনি ধর্ম নিরপেক্ষ রাজনৈতিক ধারক একজন পৌর মেয়র ব্যক্তিগত এবং গোষ্ঠীর স্বার্থে তার দলের একজন সদস্যকে সাম্প্রদায়িক গালি দিলেন এবং কেন্দ্রীয় নেতারা তাতে চুপচাপ থেকেছেন। এই সমস্ত ঘটনাগুলি অশনি সংকেত বলে অনেকেই মনে করছেন।
আওয়ামী লীগের টানা পনেরো বছরের ক্ষমতা থাকার অন্যতম যেটি শক্তির জায়গা তা হলো অসম্প্রদায়িক চেতনার লালন। আওয়ামী লীগ সাম্প্রদায়িকতাকে বিশ্বাস করে না। অসম্প্রদায়িক চেতনাকে লালন করে। ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ এই নীতিতে বিশ্বাস করে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাদের বক্তব্য আপাত বিচ্ছিন্ন মনে হলেও এর পিছনে সুগভীর সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ রয়েছে। যে সময় ভারত বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে সহযোগিতা করছে, আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করছে সেই সময় আওয়ামী লীগের কিছু কিছু নেতার এধরনের কর্মকাণ্ড দলের শীর্ষ নেতাকে বিব্রত করেছে। আওয়ামী লীগ যদি তার অসাম্প্রদায়িক চেহারার অক্ষুন্ন না রাখতে না পারে তাহলে শুধু ভারত কেন সাধারণ জনগণও আওয়ামী লীগের ওপর বিরক্ত হবে। এমনিতেই সংকটে জর্জরিত আওয়ামী লীগ। তার মধ্যে যদি আওয়ামী লীগের এই ধরনের সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ডের বিস্তার ঘটে তাহলে এই দলটিকে নতুন করে সংকটে ফেলবে বলেই অনেকে মনে করছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের কিছু নেতা এবং কর্মীদের মধ্যে উগ্র সাম্প্রদায়িক মনোভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
চট্টগ্রামের এক এমপিকে আওয়ামী লীগের এমপি নয়, বরং তাকে জামায়াতের এমপি মনে করা হয়। অনেক জায়গায় আওয়ামী লীগের নেতারা এখন নিজেদেরকে ধর্মপ্রাণ হিসেবে প্রমাণ করতে যেয়ে সাম্প্রদায়িকতার আশ্রয় নিচ্ছেন। এটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি বিব্রতকর পরিস্থিতি। তবে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক মহল এখন পর্যন্ত এসব বিষয় নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্যই করেননি। এই ধরনের বিষয়ের বিরুদ্ধে যদি এখনই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয় তাহলে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনার পরিমাণ বাড়তে পারে এবং সেটা আওয়ামী লীগের জন্য বুমেরাং হয়ে দাঁড়াতে পারে বলেও কোনো কোনো মহল মনে করছেন।