জামায়াত শিবির কে নিষিদ্ধ করায় যা বলল বিএনপি

জামায়াত ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করার পর সরকারি এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে বিএনপি। এদিন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাক্ষরিত বিবৃতিতে এ নিন্দা জানানো হয়।
বিবৃতিতে বিএনপি উল্লেখ করে, জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। আওয়ামী সরকার শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে রাষ্ট্রীয় ও দলীয় সন্ত্রাস চালিয়ে নিষ্ঠুরভাবে দমন করতে যেয়ে যে হত্যাযজ্ঞ করেছে, সেই দায় থেকে নিজেদের আড়াল করতে বিরোধী দলের ওপর দায় চাপানোর ষড়যন্ত্র করছে। অথচ বিশ্বব্যাপী প্রমাণিত সত্য এই ধ্বংস-নৈরাজ্যের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারই দায়ী।
এতে বলা হয়, সরকারের মন্ত্রী-নেতারা তাদের অপরাধ আড়াল করতে এসব ঘটনার জন্য তথাকথিত ‘তৃতীয় শক্তি’ আবিষ্কার করার অপচেষ্টা করছে এবং ‘তৃতীয় শক্তি’ হিসেবে বিএনপিসহ অপরাপর বিরোধী দলকে চিহ্নিত করতে বিরামবিহীন অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এসব করে তারা আরও ভুল করছে। কোনো ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত করে আওয়ামী লীগ সরকার এর দায় এড়াতে পারে না। তাদের নির্দেশে,  পরিকল্পনায় এই হত্যাযজ্ঞ ঘটেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সরকার বিএনসিহ অন্যান্য বিরোধী দলের ওপর দায় চাপানোর অপউদ্দেশ্যে দলের সিনিয়র নেতা এবং কর্মীসহ ১১ হাজার নিরপরাধ ছাত্র-জনতাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। অনেক নেতাকর্মী গুম হয়েছেন। রিমান্ডের নামে ও কারাগারে তাদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালানো হচ্ছে।
বিএনপি উল্লেখ করে, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন বন্ধু রাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও গণমাধ্যম যখন সরকারকে জবাবদিহি করতে বলছে, তখন আওয়ামী লীগ বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন ও চাপে রাখতে বিশ্বাসযোগ্য কোনো তদন্ত ছাড়াই জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিন্দনীয়, অগণতান্ত্রিক এবং অসাংবিধানিক। চলমান ইস্যু ধামাচাপা দিতে নতুন ইস্যু সামনে আনা হচ্ছে, যা বুমেরাং হতে বাধ্য। নন ইস্যুকে ইস্যু বানানোর পুরাতন কার্ড নতুন করে খেলে আওয়ামী লীগ জনদৃষ্টি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে পারবে না।
বিবৃতিতে বলা হয়, সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের উন্মুক্ত করা বহুদলীয় রাজনীতির হাত ধরেই বাকশালে বিলীন আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল বর্তমানে রাজনীতি করছে। বিএনপি বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’- সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়ার এই উক্তি ধারণ করে বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ নয়, উন্মুক্ত রাজনীতির ময়দানে জনগণের সমর্থনে রাজনীতি দিয়ে মোকাবেলায় বিশ্বাসী।
এতে আরও বলা হয়, আজ যাদের নিষিদ্ধ করতে চায়, সেই জামায়াতে ইসলামীর সাথে আওয়ামী লীগের সখ্যতাও সর্বজনবিদিত। এক সময় তারা পরস্পরের সঙ্গী ছিলেন। তখন জামায়াতে ইসলামীকে তাদের স্বাধীনতা বিরোধী বা জঙ্গী মনে হয়নি। কারণ জামায়াত আওয়ামী লীগের সাথে তাল মিলিয়ে চলেছিল। আজ জামায়াত আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরোধিতা করছে। তারা সঙ্গী নেই বলে জঙ্গী হয়ে গেছে। বাংলাদেশের সাংবিধানিক অধিকারবলে তারা যে কোনো রাজনৈতিক দল, সংগঠন করতেই পারেন। আন্তর্জাতিক মানের ন্যায়সংগত ও বিশ্বাসযোগ্য, গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ কোনো তদন্ত ছাড়া রাজনৈতিক দলকে অপবাদ দিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা অন্যায় এবং সংবিধান সম্মত নয়।

Related Posts