শিশির ওয়াহিদঃ পাঠ্যবইয়ে যা নেই, তা নিয়ে রীতিমতো হুলস্থুল কাণ্ড। সমালোচনার নামে যা হচ্ছে, তা বাড়াবাড়ি। আসিফ মাহতাব উৎস নামের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক যেভাবে সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের একটি অংশ নিয়ে মিথ্যাচার ও বিভ্রান্তি ছড়ালেন, তা আমাকে ভীষণভাবে অবাক করেছে।
আমি এক ছাত্রকে পড়াই, সে এবার সেভেন থেকে এইটে উঠেছে। সে সুবাদে তার ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইটির ঐ অংশটুকু ইতঃপূর্বে বেশ আগ্রহের সাথেই পড়িয়েছি। আগ্রহের কারণ, আমার পার্শ্ববর্তী উপজেলা ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের তৃতীয় লিঙ্গের নজরুল ইসলাম ঋতুর বিষয়টাও অধ্যায়টিতে লিপিবদ্ধ আছে। ঋতু দেশের প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের ইউপি চেয়ারম্যান। সম্প্রতি বিষয়টি আবারও আলোচনায় থাকায় বইটি ফের ঘেটেছি। যে অংশ নিয়ে এত বিতর্ক, আদতে সে অংশে নেতিবাচক কিছুই নেই, যেভাবে শিক্ষক আসিফ মাহতাব মঞ্চে উঠে হিংস্রভাবে হিজড়া সম্প্রদায়ের বিষয়কে সমকামিতা ও ধর্ষণে রূপদান করলেন, আদতে তার ছিটেফোঁটাও নেই। হ্যাঁ, পরবর্তী পৃষ্ঠায় অন্য দুয়েকটা শব্দ-বাক্যে আমার আপত্তি আছে, সেসব নিয়ে আলোচনা হতে পারে, গঠনমূলক সমালোচনা করা যেতে পারে, পরামর্শও আসবে। কিন্তু কোনোভাবেই সেটা হিংসাত্মক ও উগ্রপন্থায় নয়। যা নিয়ে এত আলোচনা-সমালোচনা, তার ভিত্তি এখন একমাত্র মিথ্যা ও অপপ্রচারের উপর দাঁড়িয়ে আছে এটা নির্দ্বিধায় স্বীকার করতে হবে, যা হয়তো অচিরেই প্রমাণিত হবে।
আমার কাছে বইটির বাংলা সংস্করণ আছে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ওয়েবসাইট থেকে পেয়েছি, চাইলে যে-কেউ ডাউনলোড করে পড়া যাবে, পুরোটা উন্মুক্ত। বিষয়টি বাংলাতে বুঝতে একেবারে সহজ মনে হয়েছে। যদি আলাদাভাবে বলি, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ৩৯ ও ৪০ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘নতুন পরিচয়’ প্রতিপাদ্য বিষয়ে শরীফ থেকে শরীফা হওয়ার একটি সুস্পষ্ট-সহজবোধ্য গল্প রাখা আছে, যা সমাজে ঘটে চলা বাস্তব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রচিত। শরীফ নামের একজন ছেলে কীভাবে জৈবিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে স্বাভাবিক উপায়ে নারীতে রূপান্তর হয়ে সমাজে সংগ্রাম করছে, কীভাবে সমাজের স্বাভাবিকতা থেকে তারা বিচ্ছিন্ন জীবন-যাপন করছে, সমাজের মানুষের তাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির কথা গল্পের ছলে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠ-উপযোগী করে লেখা হয়েছে। এই অংশটি বইয়ের ‘মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতা’ অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত। স্বাভাবিকভাবেই এখানে সমাজে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
শুধু হিজড়া সম্প্রদায়কে নিয়ে নয়, বেদে সম্প্রদায়, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, গৃহকর্মী সম্পর্কেও অধ্যায়টি পাঠযোগ্য করে লেখা হয়েছে। পাঠ করানোর উদ্দেশ্য, ছোটোরা তাদেরকে যেন লিঙ্গ বৈষম্য বা যেকোনো ধরনের সামাজিক বৈষম্যের দৃষ্টিতে না দেখে, তারা যে সমাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এটা আমরা বড়ো হয়ে অবহেলা যেন না করি— সংক্ষেপে বললে এতটুকুই। এখানে না আছে সমকামিতাকে উস্কে দেওয়ার মতো প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ কোনো উক্তি, না আছে ধর্ষণে প্রলুব্ধ করার মতো কোনো বিষয়, না আছে কিশোরদের মস্তিষ্ক বিগড়ে দেয় এমন কোনো লেখা। বইটির পূর্ববর্তী সংস্করণের কিছু শব্দ-বাক্য অনেকের দাবি ও গঠনমূলক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সংশোধন করা হয়েছে, বর্তমান সংস্করণ সংশোধিত। প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠি ঠিক কী কারণে, কোন উদ্দেশ্যে সমস্ত আলোচনা বাদ রেখে শুধুমাত্র হিজড়া সম্প্রদায়ের অংশটুকু নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করলো তা আমার বোধগম্য নয়। তবে এতটুকু বুঝতে পারি, তাদের উদ্দেশ্য কোনো সৎ নয়। এর পেছনে রয়েছে বৃহৎ কোনো স্বার্থ, যা উদ্ধারে তারা তৎপর।
সমালোচনার খাতিরে অনেকে শরীফার গল্পের একটি বাক্য “আমার শরীরটা ছেলেদের মতো হলেও আমি মনে মনে একজন মেয়ে” —নিয়ে নোংরা ব্যাখ্যা দিচ্ছে। কেউ-কেউ দাবি করছে ‘মনে মনে মেয়ে’ এটা আবার কী, এইটা তো সমকামিতা! চিন্তা করুন, এরা বিষয়টি কোন পর্যায়ে ডাইভার্ট করে দিয়েছে। তাদের জ্ঞাতার্থে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাসরীন সুলতানার ব্যাখ্যাটি জানিয়ে রাখা প্রয়োজন যে, ‘‘কোনো কোনো ব্যক্তি নিজেদের শারীরিক পরিবর্তন (সেক্স রিঅ্যাসাইনমেন্ট এবং হরমোন পরিবর্তন) না হলেও নিজেকে তার জৈবিক লিঙ্গের বিপরীত লিঙ্গের দাবি করে থাকে। এক্ষেত্রে যে ব্যক্তি বায়োলজিক্যালি পুরুষ কিন্তু নিজেকে নারী বলে দাবি করে, তাকে বলে ‘উইম্যান ইন মেইল বডি’ বা ‘উইম্যান ব্রেইন ইন মেইল বডি’। শরীফার গল্পতে শরীফা জন্মগতভাবে পুরুষ হলেও সে নিজেকে নারী বলে দাবি করে, অন্যদিকে শরীফার পরিচিত ব্যক্তি শারীরিক দিক দিয়ে নারী হলেও মানসিকভাবে নিজেকে পুরুষ বলে দাবি করে। অনেকে এই ধরনের ব্যক্তিকে ‘টু-স্পিরিট’ ব্যক্তিও বলে থাকে।” এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যার উপসর্গ ছোটো কাল থেকেই অনেকের মাঝে লক্ষ্য করা যায়। গল্পে শরীফাকে জৈবিক বা প্রাকৃতিকভাবে ট্রান্স-উইম্যান হিশেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, কৃত্রিম উপায়ে নয়। এর ভালো ব্যাখ্যা শিক্ষামন্ত্রণালয় বা পাঠ্যপুস্তক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দিতে পারবেন বলে ধারণা করি। যদি হিজড়াতে সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে সমস্যা তো আর হিজড়ার নয়, সমস্যা সেই ব্যক্তির মগজে। খুব বেশি সমস্যা মনে হলে সৃষ্টিকর্তাকে চিঠি লিখুন যে কেন হিজড়াদের সৃষ্টি করলেন!
প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠিটা বরাবরই পশ্চাৎমুখী। ভালো কিছু পরিবর্তনকে স্বাগত এযাবৎকালে তারা জানিয়েছে বলে আমার মনে পড়েনা। তারা বিশ্বাস করা শুরু করে দিয়েছে, এটা পাঠ করলে এই বোধহয় সবাই হিজড়া হয়ে গেল, এই বুঝি সব শেষ হয়ে গেল, এই বুঝি অনুভূতিতে আঘাত এলো— ইত্যাকার ভীতিই প্রমাণ করে তাদের বিশ্বাসের মানদণ্ড কতটা ভঙ্গুর। এরা এই ঠুনকো বিশ্বাস নিয়ে, ভঙ্গুর অনুভূতিদণ্ড নিয়ে জাতির কোন উপকারটা সাধন করতে পারবে আমাকে কেউ বলতে পারবেন? সপ্তম শ্রেণির যে শিক্ষার্থীকে আমি পড়িয়েছি, লেখাটি নিয়ে তার কোনো আপত্তি নেই, বরং সে লেখাটি বেশ ইতিবাচকভাবেই গ্রহণ করেছে। তাহলে যার বই, যাদের জন্য লেখা তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই— আসিফ মাহতাবদের এত মাথাব্যথা কেন সেটাই তো বুঝিনা!
আসিফ মাহতাব জাতীয় শিক্ষক ফোরামের যে সেমিনারে বক্তব্য রেখেছেন, সেই সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন ধর্মভিত্তিক একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান নেতা ও সমমনা প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিরা। মজার ব্যাপার, তারা দেশ ও দেশের বাইরে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠি হিশেবে অধিক পরিচিত, এ-যাবৎ প্রগতিশীল চেতনা ও নানা ধরনের স্বাভাবিক পরিবর্তনের বিরোধিতা করে বারবার আলোচনায় থেকেছে। এধরণের নির্দিষ্ট একশ্রেণির উপস্থিতিতে কোনো সভা-সেমিনার হওয়া মানে ধারণা করতেই পারেন তা হবে নিঃসন্দেহে একপেশে এবং তা সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি কেন্দ্রিক। সবকিছুকে ছাড়িয়ে আসিফ মাহতাবের উগ্র ও হিংস্রতা ভীষণ ভয়ংকর এক প্রভাব বিস্তার করছে। আমি রীতিমতো হতবাক হয়েছি তার হিংস্রতা দেখে।
বাইরের একটি দেশে ৪০% সমকামিতা সম্পর্কেও ভুল তথ্য দিয়েছেন। শুধু বিভ্রান্তিকর, মিথ্যা-বানোয়াট কথা’ই নয়, আসিফ মাহতাব প্রকাশ্যে পাঠ্যবই ছিড়েছেন, সবাইকে অবৈধপন্থায় সরকারি বই কিনে ছিড়তে উৎসাহিত করেছেন, যা ভয়ংকর রকমের অপরাধ। জনমনে উস্কানি ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি, পাঠ্যবইয়ের মতো সরকারি সম্পদ বিনষ্ট ও তাতে উৎসাহ প্রদান, এমনকি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ন্যায় রাষ্ট্রের স্বীকৃত একটি সম্প্রদায়কে উৎখাত করার মতো অপরাধে আসিফ মাহতাবের বিরুদ্ধে খুব সহজেই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি রাখে। আমার ধারণা, যে-ঘটনা তিনি ঢাকায় ঘটিয়েছেন, তা যদি উন্নত-সভ্য কোনো রাষ্ট্রের কোনো এক পাড়ার গলিতেও ঘটাতেন, এতক্ষণে তার বিরুদ্ধে সমস্ত যৌক্তিক আইনি প্রক্রিয়া প্রয়োগ করা হতো। কিন্তু ধর্মানুভূতিতে আঘাত ও সংখ্যাগুরুতার ভয়ে আমাদের যথাযথ কর্তৃপক্ষ এখনো অবধি নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে, বর্তমান প্রেক্ষাপট সেসবই নির্দেশ করে।
আসিফ মাহতাব একদিনে তৈরি হয়নি। তার হিংসাত্মক বহিঃপ্রকাশ নির্দেশ করে কতটা হিংস্রতা, উগ্রবাদিতা তারা ভেতরে-ভেতরে পোষণ করে চলেছে। অতীত ঘাটলে দেখা যায়, ইতঃপূর্বে এই ব্যক্তি ধর্ষণের পেছনে নারীর পোশাককে দায়ী করে প্রকাশ্য বক্তব্যও দিয়েছেন। এমনকি সে বাঙালির শত-সহস্র বছরের ঐতিহ্য পান্তাভাতকেও হারাম ঘোষণা করেছেন, যা তার ২০১৭ সালে দেওয়া এক ফেইসবুক স্ট্যাটাস থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়। ভাবুন একবার!
এ-ব্যক্তি এতটাই ধূর্ত যে, কৃতকর্মের দায়ে বরখাস্ত হওয়ায় সেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি মানুষকে অত্যন্ত সুকৌশলে উস্কে দিয়েছে নিজের ফেইসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে। এবং মজার ব্যাপার সে এ-কাজে অনেকাংশে সফল। উগ্র-ধর্মান্ধ জনতা তার দেওয়া পাঠ্যবই কেন্দ্রিক বক্তব্যের যেমনটা যাচাই-বাছাই না করেই ফেইসবুক জিহাদে নেমে পড়েছে, তেমনভাবে ঐ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও তার অঙ্গ-সহযোগী প্রতিষ্ঠান বয়কট করার ঘোষণায় মাঠে নেমে পড়েছে। বলে রাখা ভালো, এর আগে এই তথাকথিত তৌহিদি জনতা বয়কট করে ফ্রান্সকে উড়িয়ে দিয়েছে, তাদের বয়কটের কারণে ফ্রান্স গতবার ফিফা বিশ্বকাপে গো-হারা হেরেছে। বয়কট করে সাকিব-আল হাসানকে ক্রিকেটার থেকে এমপি বানিয়েছে, বয়কট করে ভারতকে চাঁদে পাঠিয়েছে, ইজরায়েল তো একেবারে শেষ! এ বয়কটের মধ্য দিয়ে এবার হয়তো জাতি নতুন কিছু পেতে চলেছে। একদিন দেখা যাবে তাদের বয়কট ব্যুমেরাং হয়ে নিজদের দিকেই ফিরবে।
জনাব আসিফ মাহতাবের সমকামিতা সম্পর্কিত দাবিকে একেবারে ফেলে দেওয়ার মতোও নয়। দেশে আসলেই সমকামিতা বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে আসিফ সাহেব ভুল জায়গাকে নির্দেশ করেছেন। সমকামিতা পাঠ্যবইয়ে নয়, বরং অন্যখানে। দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মাদ্রাসাগুলোতে অধিকাংশই এখন সমকামিদের বিচরণ, আবারও বলছি, সবখানে নয়— অধিকাংশ জায়গাতেই। ছোটো ছোটো ছেলেগুলো রেহাই পাচ্ছেনা সমকামি ধর্ষকদের কবল থেকে। এই সমকামি-ধর্ষণকে আসিফ সাহেবরা আদর করে বলাৎকার বলেন। দেশে সমকামিতা-বলাৎকার কোন পর্যায়ে চলে এসেছে তা জানার জন্য গুগল’ই যথেষ্ট। গুগলে বলাৎকার লিখে সার্চ করুন, হাজার-হাজার সংবাদ পাবেন। কত-শত ঘটনা যে চাপা পড়ে থাকে, তা আল্লাহ মালুম। যে সমকামিতা নিয়ে এত বিতর্ক, যেটা নিয়ে কথা বলা প্রয়োজন সেসব নিয়ে আসিফ সাহেবরা টু-শব্দটি করেন না। কারণ তাদের সস্তা জনপ্রিয়তার বাজারের যোগান যে ঘাটতিতে পড়বে!
উগ্রপন্থি ব্রেনওয়াশ এই প্রজাতিকে নিয়ে কিছু বলাটাও, লেখাটাও ভীষণ আতঙ্কের ব্যাপার। কখন-না জানি কী হয়ে যায়— এই আতঙ্কটা ইদানিং পিছু ছাড়ছেনা। দেখুন, মতের বিপরীতে মত থাকবে, আলোচনা-সমালোচনা সবকিছুই থাকবে, সবাই নিঃসঙ্কোচে অহিংস উপায়ে প্রকাশ করবে, ভিন্নমতকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে হবে— এটাই বাকস্বাধীনতা। কিন্তু আজকাল আসিফ সাহেবদের উগ্রপন্থি আচরণ নিয়ে সাধারণ মতামতও প্রদান করা যায়না, ফেইসবুকে লিখতে গেলে তাদের সংঘবদ্ধ একটি লাঠিয়াল বাহিনী সদলবলে হামলে পড়ে গুষ্ঠি উদ্ধার করতে। তৃতীয় লিঙ্গ ও পাঠ্যবই কেন্দ্রিক আসিফ মাহতাবদের মিথ্যাচারের বিপরীতে মতামত দেওয়ায় অনেকে ফেইসবুকের বার্তাঘরে ঢুকে হিজড়া, সমকামি, আরও নানারকম আখ্যা দিচ্ছে, গালাগালি-অশ্লীল ভাষার ব্যবহার তো ফ্রি! কী হিংস্র তাদের আচরণ, কী কুৎসিত তাদের ভাষাগত ব্যবহার। অথচ রাষ্ট্র আমাকে সুন্দর একটি সহনশীল পরিবেশ উপহার দিতে পারতো, এ দায় রাষ্ট্রযন্ত্র এড়ায় কীভাবে? আজকে একটা আসিফ মাহতাবকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, এমন লাখ-লাখ আসিফ মাহতাব দেশের আনাচে-কানাচেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে, আরো তৈরি হচ্ছে— যারা সুযোগের অভাবে জঙ্গি হতে পারেনা। খুব বেশি না, রাষ্ট্রযন্ত্র এদের কয়েকটার বিরুদ্ধে যদি দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতো, তবুও একটু আশার জায়গা অবশিষ্ট থাকতো। কিন্তু সে আশার জায়গা আমরা তো পাইনি!
আসিফ মাহতাবরা সুযোগের অভাবে জঙ্গি হতে পারেনা৷ একজন বিদেশ ফেরত উচ্চশিক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের কাছ থেকে আমাদের বই ছেড়া শিখতে হচ্ছে। এটা ভয়ংকর, ভীষণ ভয়ংকর। ব্যাপারটা চাইলে অন্যরকমও হতে পারতো। সব লেখা, সব বিষয় যে সবার মনঃপুত হবে, তা-তো নয়। আসিফ মাহতাব চাইলে যথাযথ উপায়ে সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের পরামর্শ দিতে পারতেন, যৌক্তিক দাবি উত্থাপন করতে পারতেন, আমার বিশ্বাস সে সুযোগ তার ছিলো। কিন্তু সেসব তিনি করেননি। তিনি ধর্মকে হাতিয়ার হিশেবে ব্যবহার করলেন, ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে ধর্মান্ধতাকে উস্কে দিলেন, বৃহৎ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠির আস্ফালন ত্বরান্বিত করে জঙ্গিবাদকে উস্কে দিলেন৷
জোশের বশে এ-কাজ বহুদিন ধরে এদেশে হয়ে চলেছে, সব দেখেশুনেও সবাই কেমন যেন গা-ছাড়া ভাব নিয়ে আছে! আর না— লাগাম টানার সময় এসেছে। মানুষের প্রতি আমার আহবান থাকবে, উগ্রপন্থি কোনো ব্যক্তির কথায় চিলের পেছনে না ছুটে সবাই বইটা পড়ুন, কী লেখা আছে জানুন। যেকোনো তথ্য অন্ততপক্ষে দুবার যাচাই করুন। বিশ্বাস করুন, যদি মিথ্যাচারের সাজা সত্যিই পরকালে হয়ে থাকে, তাহলে সৃষ্টিকর্তা সর্বাগ্রে ঐ মিথ্যাচার ও অপপ্রচারকারীকেই দেবেন।
sarabangla / লেখক: শিক্ষার্থী, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ