বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় প্রধানত তিন প্রকারের সমস্যায় জর্জরিত। এই তিন প্রকার সমস্যার সমাধান করা হলে, তবেই হিন্দু সম্প্রদায়ের কল্যাণ হবে, নচেৎ নয়। এ তিনপ্রকারের সমস্যা হল:
১. রাষ্ট্রযন্ত্রের বৈষম্য
২. মিথ্যা তথ্যসন্ত্রাস
৩. সম্প্রদায়ের নিজস্ব সমস্যা
তিন প্রকারের সমস্যার প্রথম সমস্যা হলো রাষ্ট্রযন্ত্রের বৈষম্য। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে একটি মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ নামক একটি অসাম্প্রদায়িক জাতিরাষ্ট্রের জন্ম হয়। যে রাষ্ট্রের সংবিধানে দেশের সকল সম্প্রদায়ের মানুষের সমানাধিকারের কথা বলা হয়।বাংলাদেশ সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকার অংশে সুস্পষ্টভাবে ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষভেদ বা জন্মস্থান নির্বিশেষে সকল নাগরিকদের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে।
“অনুচ্ছেদ -২৮: (১) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না।
(২) রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারীপুরুষের সমান অধিকার লাভ করিবেন।
(৩) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে জনসাধারণের কোন বিনোদন বা বিশ্রামের স্থানে প্রবেশের কিংবা কোন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে কোন নাগরিককে কোনরূপ অক্ষমতা, বাধ্যবাধকতা, বাধা বা শর্তের অধীন করা যাইবে না ।
(৪) নারী বা শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান-প্রণয়ন হইতে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না।”
সংবিধানের সর্বক্ষেত্রে দেশের সংখ্যালঘুসহ সকল নাগরিকের প্রতি বৈষম্যহীনতার কথা বলা হয়েছে। কিন্ত সংবিধানে বলা হলেও, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের সাথে বৈষম্য বা রাষ্ট্রযন্ত্রের বিমাতাসুলভ আচরণ সর্বত্র দৃশ্যমান। এ দৃশ্যমান বৈষম্যের অসংখ্য দৃষ্টান্ত দেয়া যায়। অন্য পূর্ববর্তী বিবিধ বৈষম্যের বিষয়টি বাদ রেখে, যদি শুধু বর্তমান ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের বাজেটে দিকে একটু দৃষ্টি দেয়া হয়, তবে যে কেউ সুস্পষ্টভাবে বিষয়টি সহজেই উপলব্ধি করতে পারবে। এর জন্যে তাকে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি ধারণ করতে হবে না। শুধু ঈশ্বর প্রদত্ত চোখ কান খোলা রাখাই যথেষ্ট। তবেই সে বুঝতে পারবে যে, একসাথে বসবাস করেও সংখ্যাগরিষ্ঠের সাথে সংখ্যালঘিষ্ঠের বৈষম্য কতটা তীব্রতর। দেশের সংবিধানে ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষভেদ বা জন্মস্থান নির্বিশেষে সমানাধিকারের সুরক্ষাকবচ থাকলেও ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সমান অধিকারের বিষয়টিকে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করে পিছদুয়ারের নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাজেটে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সাথে এক দৃশ্যমান ভয়াবহ বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। যা সমানাধিকারের দৃষ্টিতে অত্যন্ত দৃষ্টিকটু। এ বিষয়টি নিয়ে দেশের প্রথম শ্রেণীর ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য ডেইলি স্টার’ এর অনলাইন বাংলা সংস্করণে ‘প্রস্তাবিত বাজেটে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য বরাদ্দ দুঃখ ও উদ্বেগজনক’ (২৯.০৫.২০২১) -এ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সেই সংবাদে বলা হয়েছে যে, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বাজেটে চলমান প্রকল্প ও অন্যান্যে মোট বরাদ্দ হিসেবে ১৫,০৫৪.০৩ কোটি টাকা রাখা হলেও তার মধ্যে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯০.০৮ কোটি টাকা যা মোট প্রকল্প বরাদ্দের শতকরা ১ দশমিক ৯৩ শতাংশ। প্রসঙ্গে স্মর্তব্য, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যের ‘হে মোর দুর্ভাগা দেশ’ কবিতার কয়েকটি পঙক্তি :
“হে মোর দুর্ভাগা দেশ, যাদের করেছ অপমান,
অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান!
মানুষের অধিকারে
বঞ্চিত করেছ যারে,
সম্মুখে দাঁড়ায়ে রেখে তবু কোলে দাও নাই স্থান,
অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান।
যারে তুমি নীচে ফেল সে তোমারে বাঁধিবে যে নীচে
পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে।
অজ্ঞানের অন্ধকারে
আড়ালে ঢাকিছ যারে
তোমার মঙ্গল ঢাকি গড়িছে সে ঘোর ব্যবধান।
অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান।”
পাকিস্তানের মত একটি পশ্চাদপদ মৌলবাদী মানসিকতার দেশেও সংখ্যালঘু মন্ত্রনালয় রয়েছে। পৃথিবীর বহু দেশে প্রায় সকল দেশেই সংখ্যালঘু মন্ত্রনালয় রয়েছে। অথচ বাংলাদেশে এত বড় সংখ্যায় প্রায় তিন কোটির উপরে সংখ্যালঘু থাকার পরেও, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের কল্যাণে কোন সংখ্যালঘু মন্ত্রনালয় নেই। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। দেশে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় তো নেই; সাথে সাথে সংখ্যালঘু কমিশনও নেই। নেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের রক্ষার্থে বিশেষ সুরক্ষা আইন। সংখ্যালঘুদের বিবিধ প্রকারের সমস্যায় তাদের যাওয়ার কোন স্থান নেই। তারা জানেনা যে তাদের সমস্যার তারা কার কাছে যাবে এবং কাকে জানাবে। অনেকে হয়ত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছে যান। কিন্তু তাদের দ্বারা কদাচিৎ সমস্যার সমাধান হলেও, সিংহভাগ সমস্যারই কোন সমাধান হয় না। উল্টো তারা বিবিধ প্রকারের জটিলতার সৃষ্টি করেন। রাজনীতিবিদরা বরং বানরের পিঠাভাগের মত, সমস্যার একজন লাভজনক উপভোক্তা হয়ে যান। দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান, সাংসদ এবং মন্ত্রীসহ অনেকেই আছেন। কিন্তু তারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের মাঝে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মাঝে কাজ করে বলে খুব একটা প্রমান পাওয়া যায় না। কদাচিত যা করে, তার সিংহভাগই সাময়িক এবং লোকদেখানো। দীর্ঘমেয়াদে তাদের সংখ্যালঘুদের কল্যাণে কাজ করতে কখনো দেখা যায় না। তবে সাংসদদেরও দোষ দিয়েও খুব একটা লাভ নেই। তারা একটি দলের সাংসদ, দলের নীতি আদর্শ এবং লক্ষ্য উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করাই তাদের কাজ। সংসদে সাংসদের কিছু বলতে হলে নিজ দলের দলীয় হুইপের থেকে অনুমতি নিতে হয়। তাই একজন সাংসদ যদি কখনো নিরপেক্ষভাবে দলকে পাশকাটিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলেন; তবে তার দল থেকে বহিষ্কারের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। তাই তারা মন চাইলেও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকারের প্রশ্নে খোলামেলা কথা বলতে পারেন না। হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে সমানুপাতিক ন্যায্য অবস্থান নেই। বিষয়টি অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রটির জন্যে সমীচীন নয়।আদমশুমারি ছাড়াও প্রতিবছর পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের অধীনে বিবিএস বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস প্রকাশ করে৷ ২০১৮ সালে বিবিএস এর প্রতিবেদনে বলা হয় বাংলাদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠী মোট জনসংখ্যার ৮৮.৪ ভাগ৷ হিন্দু এবং অন্য ধর্মাবলম্বী ১১.৬ ভাগ৷ সেই পরিসংখ্যানে হিন্দুদের শতকরা হার আলাদাভাবে দেওয়া হয়নি।তবে বিবিএস-এর ২০১৫ সালের প্রতিবেদনে মোট জনসংখ্যার ১০.৭ শতাংশ হিন্দু ধর্মাবলম্বী বলে উল্লেখ করা হয়৷ প্রায় ১০% বেশি হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য সাংসদ থাকার কথা নূন্যতম ৩৭ জন। কিন্তু বাস্তবে আছে মাত্র ১৬ জন। ৩৫০ জন সংসদ সদস্যদের মধ্যে শতাংশের হিসেবে হিন্দু সাংসদ হলেন মাত্র ৪.৫৭%। যা মোট জনগোষ্ঠীর শতাংশের অর্ধেকেরও কম। একাদশ জাতীয় সংসদে অন্যান্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে সংখ্যালঘু প্রতিনিধিত্ব তুলনামূলক বেশি। তবে তুলনামূলক একটু বেশি হলেও সংখ্যাটি আশাব্যঞ্জক নয়। সংখ্যাটি সমানুপাতিক শতাংশের অর্ধেকের থেকেও কম।
এমন অনেক বিষয় রয়েছে, যা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি বৈষম্যপূর্ণ বিমাতাসুলভ আচরণের এক মর্মান্তিক ছবি। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী যে অতিরিক্ত সুযোগ সুবিধা ভোগ করে, সেই সুযোগ সুবিধার কিঞ্চিৎ পরিমাণ যদি সংখ্যালঘু সম্প্রদায় পেত, তবে তাদের মধ্যে হয়ত এত দুঃখ বেদনা বা ক্ষোভ থাকত না। এ বৈষম্যের কাহিনী সারাদিন বসে বললেও শেষ হবে না। আমরা দেখতে পাই, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গত বছরে ইসলাম ধর্মের প্রসারের হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সেই হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে কয়েকটি লোকদেখানো সান্ত্বনা পুরষ্কার । সে সান্ত্বনা পুরষ্কার হল-মন্দির ভিত্তিক প্রাক প্রাথমিক শিশু শিক্ষা; পুরোহিত সেবক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ; পুরাতন মঠ-মন্দির সংস্কার; দুর্গাপূজায় মন্দিরে চাল বরাদ্দ ইত্যাদি। এর বিপরীতে সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের মানুষের ধর্মীয় ক্ষেত্রে বরাদ্দ দেখলে চোখ ছানাবড়া হয়ে যেতে হয়। তখন সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মাঝে বিমাতৃসুলভ বৈষম্যটি সুস্পষ্টভাবে ধরা পরে। সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মীয় খাতে বরাদ্দ প্রসঙ্গে দেশের প্রথম সারির জাতীয় দৈনিক ‘যুগান্তর’ পত্রিকায় (১৮.০১.২০১৯) হাফেজ মুহম্মদ ওমর ফারুক ‘ইসলামের খেদমতে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার অবদান’ শিরোনামে লেখেন:
“বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ইসলাম ও মুসলমানদের খেদমতে নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করেন : সংক্ষিপ্তভাবে এখানে তা তুলে ধরছি।
আল-কোরআনের ডিজিটালাইজেশন; ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ; দেশের ৩১টি কামিল মাদ্রাসায় অনার্স কোর্স চালু করা; যোগ্য আলেমদের ফতোয়া প্রদানে আদালতের ঐতিহাসিক রায়; জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সৌন্দর্যবর্ধন ও সম্প্র্রসারণ, সুউচ্চ মিনার নির্মাণ, দক্ষিণ সাহান সম্প্রসারণ, সৌন্দর্যবর্ধন ও পূর্ব সাহানের ছাদ নির্মাণ, মহিলাদের নামাজ কক্ষ সম্প্রসারণ, সাহানের স্থান সম্প্রসারণ ও কমপ্লেক্স নির্মাণ; ইসলামিক ফাউন্ডেশন লাইব্রেরি ভবন নির্মাণ;
বাংলাদেশে ইসলামের প্রচার বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও রাজকীয় সৌদি আরব সরকারের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর; হজ ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার; জেদ্দা হজ টার্মিনালে ‘বাংলাদেশ প্লাজা’ স্থাপন; আশকোনা হজক্যাম্পের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি; রেকর্ড সংখ্যক হজযাত্রী প্রেরণ; হজ ব্যবস্থাপনায় সৌদি সরকারের স্বীকৃতি; মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমে আলেম-ওলামাদের কর্মসংস্থান ও বেতন-ভাতা বৃদ্ধি; শিশু ও গণশিক্ষা এবং কোরআন শিক্ষা কার্যক্রমে মাহিলাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণ;
জাতীয় শিক্ষানীতিতে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমকে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্তিকরণ; কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সনদের সরকারি স্বীকৃতির জন্য আলাদা কমিশন গঠন; ১০০০টি বেসরকারি মাদ্রাসার একাডেমিক ভবন নির্মাণ; প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নাধীন; ইমাম প্রশিক্ষণ কার্যক্রম; ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন; ইসলামী প্রকাশনা প্রকল্প বাস্তবায়ন; ইসলামিক মিশন কেন্দ্রের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা প্রদানের ব্যবস্থা;
মসজিদ পাঠাগার স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়ন; ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম ডিজিটালে রূপান্তর; জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস প্রতিরোধ ও সামাজিক সমস্যা সমাধানে ইসলাম শীর্ষক কর্মসূচি বাস্তবায়ন; প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিশ্বনেতাদের কাছে বাংলাদেশের আলেম-ওলামাদের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা; মসজিদ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য আর্থিক অনুদান প্রদান; চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক আন্দরকিল্লাহ শাহী জামে মসজিদের উন্নয়নে বিশাল অঙ্কের বাজেট অনুমোদন;
চট্টগ্রাম জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ কমপ্লেক্স ফাউন্ডেশনের অনুকূলে ন্যস্তকরণ; পবিত্র রমজানে মসজিদে মসজিদে ব্যাপক কোরআন শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা; সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে গণসচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ; আন্তর্জাতিক হিফজ, কিরাত ও তাফসির প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সাফল্য; জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অনুমোদিত প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন মডেলে ইসলামী মূল্যবোধের প্রতিফলন;
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারণের ঘোষণা ও বাস্তবায়ন; প্রতি জেলা ও উপজেলা সদরে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের আদলে মসজিদ নির্মাণের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও উপজেলা পর্যায়ে একটি করে মসজিদ সরকারিকরণ এবং একটি গ্রাম একটি মক্তব চালু করার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
ইসলামের প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সুযোগ্য কন্যা কওমি জননী জননেত্রী শেখ হাসিনার যুগান্তকারী অবদানের কথা বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।”
ইংরেজিতে দুটি শব্দ আছে ‘EQUALITY’, ‘EQUITY’; এ দুটি শব্দের মধ্যে একটি শব্দের অর্থ ‘সমতা’ এবং অন্যটির অর্থ ‘ন্যায্যতা’। সমতার নামে সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘুদের অসম দৌড়ে ফেলে দেয়াটা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং যুগপৎ দুর্ভাগ্যজনক। একটি কল্যাণকর রাষ্ট্রে সংখ্যালঘুদের প্রয়োজন সমতার সাথে সাথে রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে মানবিক ন্যায্যতা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশ গণপরিষদে একটি ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন। সেই ঐতিহাসিক ভাষণের শেষপ্রান্তে বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে কথাগুলো বলেন, তা বর্তমান সময়ের জন্যে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। তিনি বলেন:
“ভবিষ্যৎ বংশধররা যদি সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে শোষণহীন সমাজ গঠন করতে পারে, তাহলে আমার জীবন সার্থক, শহীদদের রক্তদান সার্থক।”
দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জীবন, সংস্কৃতির উন্নয়ন এবং কল্যাণে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয়ের পরে দ্বিতীয় প্রয়োজনীয় হল সংখ্যালঘু কমিশন। এ কমিশন সংখ্যালঘুদের নির্যাতন সহ সার্বিক সুরক্ষায় বিভিন্ন আইনগত সাহায্য সহায়তা দিবে। এতে সংখ্যালঘুদের মনবল বৃদ্ধি পেয়ে, দেশত্যাগের প্রবণতা ধীরেধীরে কমবে। এরপরে তৃতীয় সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন হওয়া উচিত, এতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের মাঝে সাম্প্রদায়িক আক্রমণের প্রবণতা কমবে। চতুর্থত আরেকটি বিষয় অত্যন্ত প্রয়োজন। তা হল ‘হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্ট’কে ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের আদলে হিন্দু কল্যাণ ফাউন্ডেশনে পরিণত করা। এর মাধ্যমে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের ধর্মীয় শিক্ষার প্রসার ঘটবে।
কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী
সহকারী অধ্যাপক,
সংস্কৃত বিভাগ,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়