গণ-পরিষদ নেতা নুরুল হক বলেছেন, ‘রাজনীতির মাঠ এখন কোরবানীর হাট, নেতারা গরু-ছাগলের মত বিক্ৰী হচ্ছে’। তিনি পাতানো নির্বাচনে যাবেন না তা সাফ জানিয়ে দিয়ে বলেছেন, যাঁরা নির্বাচনে যাবেন না, গণ-পরিষদ ক্ষমতায় গেলে তাঁদের রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। নুরুল হক নিজেই নেতা, অন্য নেতাদের তিনি একেবারে ‘গরু-ছাগলের’ পর্যায়ে নামিয়ে এনে কাজটা ভালো করেননি, তাদেরও তো একটি মান-সন্মান আছে, নাকি?
দেশে ৫৮৬জন বিশিষ্ঠ নাগরিক বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, একতরফা নির্বাচন দেশকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যাবে। এই বিশিষ্ট নাগরিকরা অনেকেই বিএনপি ঘরানার। আমাদের দেশে দুই ধরনের বুদ্ধিজীবী রয়েছেন, আওয়ামী ঘরানার বুদ্ধিজীবী এবং বিএনপি ঘরানার বুদ্ধিজীবী। অনেকে আবার মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ-বিপক্ষ বলে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক’দিন আগে ঠাট্টা করে বুদ্ধিজীবীদের কি যেন কি একটা বলেছেন, এজন্যে ওনারা বেশ ‘মাইন্ড’ করেছেন।
এটি সত্য, এক তরফা নির্বাচন হলে দেশ সংঘাতের দিকে যেতে পারে, এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। নির্বাচনটি একতরফা হচ্ছে কি? বিএনপি ব্যতিত প্রায় সবাই তো নির্বাচনে আসছে! নির্বাচনটি গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও সুষ্ঠূ হতে হবে। সেটি কতটা সম্ভব বলা মুশকিল। সরকার চাইলেও প্রার্থীরা অনেকেই মনে করেন, দলীয় মনোনয়ন পাওয়া মানেই বিজয়! অনেকেরই ‘বিনা ভোটে’ অথবা ‘গায়ের জোরে’ জেতার একটি বদভ্যাস গড়ে উঠেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠূ হবে। বিএনপি মাঠে নেই, নির্বাচন সুষ্ঠূ না হওয়ার কোন কারণ নেই! ফলাফল যাই হোক, দেশের স্বার্থে নির্বাচনটি অবাধ ও সুষ্ঠূ হওয়া দরকার। এজন্যে সরকারকে কাজ করতে হবে। দলীয় নেতাকর্মী, স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ-আনসার বাহিনী সঠিক দিক-নির্দেশনা না পেলে ‘সকলই গরল ভেল’! জনগণ যাতে ভোট দিতে পারে। মানুষ নির্ভয়ে ভোট দিতে না-পারলে ‘ভোটের চিত্র’ আগের মতই থাকবে। দুর্নাম ঘুঁচবে না!!
রাষ্ট্রবিদ স্যামুয়েল জনসন-র মতে, ‘রাজনীতি হচ্ছে সুবিধাবাদীদের শেষ আশ্রয়’। এদের ঠেকানো না গেলে নির্বাচন সুষ্ঠূ হবেনা। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হলে এর দায় সরকারের। এবারকার নির্বাচনটি’র দিকে বিশ্ববাসীর নজর আছে। ২০১৪’র নির্বাচনের পর দ্রুত আর একটি নির্বাচনের কথা বলা হয়েছিলো, হয়নি। ২০১৮-তে সুষ্ঠূ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি রক্ষিত হয়নি। ২০২৪-এ অবাধ ও সুষ্ঠূ নির্বাচনের অঙ্গীকার অসত্য হলে, ‘বাঘ এলো, বাঘ এলো’ গল্পের মত হয়ে যেতে পারে?
বাংলাদেশে নির্বাচন এলেই গন্ডগোল শুরু হয়? এ সময়ে যত ঝামেলা সবকিছু নির্বাচন নিয়ে? নির্বাচন না হলে তো ঝামেলা হতোনা। নো নির্বাচন, নো ঝামেলা। ‘মদিনা সনদের’ দেশে অথবা নব্বই শতাংশ মুসলমানের দেশে নির্বাচন-টির্বাচনের দরকারটা কি? হাতে গোনা ক’টি দেশ বাদ দিলে মুসলিম বিশ্বে তো নির্বাচনের কোন ঝামেলা নেই। এতে টাকা-পয়সা বাঁচে! সেই টাকাটা জনকল্যাণে খরচ করা যেতে পারে। নির্বাচন না থাকলে সুবিধাবাদী, তোষামোদকারীর সংখ্যা কমবে! কত লাভ!
– সিতাংশু গুহ