সুনামগঞ্জে শতাধিক কর্মকতার বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ তুলে তাঁদেরকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ কাজে যুক্ত না রাখার বিষয়ে মত দিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। প্রার্থীদের কেউ কেউ ইতিমধ্যে জেলার নির্বাচন পরিচালনা কাজে দায়িত্ব কর্মকর্তারদের কাছে লিখিত /মৌখিক অভিযোগ জানিয়েছেন অন্যরা অভিযোগ জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সুনামগঞ্জ জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসনের মধ্যে একটি আসন ব্যতিত অন্য সবকয়টিতেই তিব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে । মাঠ পর্যায়ে জমে উঠা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এসব আসনের শতাধীক সরকারি—আধাসরকারি কর্মকর্তাকে ভোট গ্রহণের দায়িত্বে না রাখার মত দিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীরা ।
সোমবার (১জানুয়ারী) বিভিন্ন প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকরা জানান, সরকারি ও আধাসরকারি এসব কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে, একজন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (এসিল্যাণ্ড), একজন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ স্কুল—কলেজের শিক্ষকগণই বেশি রয়েছেন।
সুনামগঞ্জ—১ (ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর ও মধ্যনগর) আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাড. রনজিত সরকার বললেন, নির্বাচনী এলাকার চার উপজেলার ৪০ জন প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারকে নির্বাচনী দায়িত্বে না রাখার জন্য অনুরোধ জানাবেন তিনি। দুয়েকদিনের মধ্যেই তাঁর পক্ষ থেকে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে এই বিষয়ে আবেদন জানানো হবে। তিনি জানান, একজন প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে সক্রিয় আছেন এসব কর্মকর্তারা। ওই প্রার্থীর প্রতি দুর্বলতা আছে তাদের।
এই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন মোবাইলে ‘ডেইলি মেসেঞ্জার কে জানিয়েছেন, ‘কিছু কর্মকর্তা পক্ষপাতমুলক আচরণ করছেন তবে আমি বিশ্বাস রাখতে চাই উনারা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। তবে কারো বিরুদ্ধে আমি অভিযোগ করতে চাই না।’
সুনামগঞ্জ—২ (দিরাই—শাল্লা) আসনের দিরাই উপজেলার এসিল্যান্ড জনি রায়সহ ৪০ জন প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারকে নির্বাচনী দায়িত্ব না দেবার অনুরোধ জানাবেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আল—আমিন চৌধুরী। আল—আমিন চৌধুরী জানান, তিনি শনিবারের মধ্যেই রিটার্নি কর্মকর্তার নিকট এই আবেদন জানাবেন।
আল—আমিন চৌধুরী বললেন, এসব কর্মকর্তাদের বেশিরভাগই স্কুল—কলেজের শিক্ষক। তারা একজন প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। তাদেরকে ভোট কর্মীর দায়িত্ব দিলে পক্ষপাতিত্ব হতে পারে।
সুনামগঞ্জ—৪ (সদর—বিশ্বম্ভরপুর) আসনের বিশ্বম্ভপুর উপজেলায় চার জন ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাকে দায়িত্বে না রাখার জন্য জাতীয় পার্টির প্রার্থীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এছাড়া সুনামগঞ্জ সদরের একজন প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকেও ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তার দায়িত্বে না রাখার জন্য এক প্রার্থীর পক্ষে বলা হয়েছে বলে জানা গেছে। এই প্রার্থীন একজন ঘনিষ্ঠ কর্মী জানিয়েছেন সরকারি দলের প্রার্থীর পক্ষে অনেক সরকারি চাকুরিজীবী প্রচারণা সহ বিভিন্নভাবে পক্ষপাতমুলক আচরণ করছেন। তিনি সাংবাদিকদের সজাগ নজর রাখার অনুরোধ করেন।
সুনামগঞ্জ—৫ (ছাতক—দোয়ারাবাজার) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম চৌধুরী জানালেন, নির্বাচনী এলাকার দুই উপজেলার ৪০ জন কর্মকর্তাকে ভোট গ্রহণের দায়িত্বে না রাখার জন্য অনুরোধ জানিয়ে আবেদন করবেন তিনি। এই আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক ফোন রিসিভ না করায় এই বিষয়ে তাঁর কোন আপত্তি থাকবে কী—না জানা যায় নি।
বেসরকারি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি শুভঙ্কর তালুকদার মান্না বললেন, এমপিভূক্ত কলেজ বিশ^ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত আছেন। তবে নির্বাচনের ভোট গ্রহণের দায়িত্ব পাওয়া কোন শিক্ষক কর্মচারীরা কোন প্রার্থীর পক্ষে ভোটের প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। তারা যেহেতু এই সময়ে নির্বাচন কমিশনের অধীনে আছেন, প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর যে কেউ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে পারেন। নির্বাচন কমিশন অভিযোগের সত্যতা পেলে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিতে পারবে।
সুনামগঞ্জে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিজন কুমার সিংহ বললেন, বিশ্বম্ভরপুরে চার জন ও দিরাই দুইজন প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে ভোটের দায়িত্বে না রাখতে আবেদন পেয়েছেন তারা। অন্য কোন আবেদন এখনো পাওয়া যায় নি। তবে নির্বাচনকে অধিক গ্রহণযোগ্য করতে যে কেউ অভিযোগ অনুযোগ লিখিত বা মৌখিকভাবে দিলেও গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন তারা। ভোট গ্রহণের জন্য এই জেলায় প্রিজাইডিং কর্মকর্তা কম পাওয়া যায় উল্লেখ করে এই কর্মকর্তা বললেন, তবুও ভোট গ্রহণের তালিকায় ১০ শতাংশ কর্মকর্তার নাম অতিরিক্ত রাখা হয়েছে। কোন অভিযোগ আসলে, অতিরিক্ত তালিকা কাজে লাগানো হবে।
প্রসঙ্গত. সুনামগঞ্জ—৩ (জগন্নাথপুর—শান্তিগঞ্জ) আসনে ভোটের উত্তেজনা অন্য আসনের চাইতে কম। এই আসনে বর্তমান হেভিওয়েট প্রার্থী পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নানের সঙ্গে লড়ছেন তৃণমূল বিএনপির শাহীনুর পাশা চৌধুরী।