ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) থেকে বদলির ঘটনাকে ‘আরও বিস্তৃত পরিসরে’ কাজ করার সুযোগ হিসেবে দেখছেন অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ।
আলোচিত এ পুলিশ কর্মকর্তার ডিবিতে শেষ কর্মদিবস ছিল বৃহস্পতিবার। এদিন সন্ধ্যায় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে মিন্টু রোডে ডিবি কার্যালয়ের ফটকে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি অল্প সময় কথা বলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমার ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে আরেকটি জায়গায় পদায়ন করেছে। ডিএমপিতে বিস্তৃত পরিসরে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে।
“মানুষের সব শেষ ভরসাস্থলের জায়গা থানা। থানা যেন মানুষকে সেবা দিতে পারে, সেই লক্ষ্যে আমি চেষ্টা করব। যাতে সাধারণ মানুষ থানায় আসে এবং সেবাটা পায়। যে কোনো ঘটনায় থানায় গিয়ে জিডি-মামলা করতে পারে। চেষ্টা করব থানাকে সাধারণ মানুষের আস্থায় নিয়ে যেতে।”
বুধবার এ পুলিশ কর্মকর্তাকে গোয়েন্দা বিভাগ থেকে সরিয়ে ডিএমপির ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্সে বদলির আদেশ আসে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কারীকে ডিবি কার্যালয়ে ‘নিরাপত্তা হেফাজতে’ নেওয়া নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে তাদের সঙ্গে খাওয়ার ছবি ফেইসবুকে প্রকাশ হলে তা নতুন আলোচনা তৈরি করে। এ নিয়ে হাই কোর্ট উষ্মা প্রকাশের পর হারুন অর রশিদের বদলির আদেশ আসে।
তার জায়গায় নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন অতিরিক্ত কমিশনার আশরাফুজ্জামান। তিনি এর আগে ডিএমপির লজিস্টিকস ফিন্যান্স ও প্রকিউরমেন্টের দায়িত্বে ছিলেন।
ডিবি থেকে বিদায়ের সময় হারুন বলেন, “আমি ৩ বছর ৩ মাস ডিবিতে কাজ করেছি। আপনারা সবসময় আমার পাশে ছিলেন। আমি চেষ্টা করেছি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ মেনে ডিবিকে সাধারণ মানুষের আস্থার দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়া।
“চাকরিকালীন আমি সাধারণ মানুষের কাছে ডিবিকে একটা আস্থার জায়গায় পরিণত করেছি। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ, তথা বিশ্বের মানুষ জানে কারোও কোনো সমস্যা হলে ডিবিতে গেলে প্রবলেম সলভ হতে পারে। এই মনে করে অসংখ্য মানুষ আমাদের কাছে আসছে। আমরা চেষ্টাও করেছি তাদের কাজটা সুন্দরভাবে করে দেওয়ার। যার কারণে সাধারণ মানুষ ডিবির নামটা জানে। আমি চেষ্টা করেছি ডিবিকে একটা আস্থার জায়গায় নিয়ে যেতে।”
কোটা আন্দোলনে সহিংসতা ও গ্রেপ্তারের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “যারা ঘটনার সঙ্গে প্রকৃতপক্ষে জড়িত, যারা আগুন লাগিয়েছে, মেট্রোরেলে ভাঙচুর-অগ্নিকাণ্ড করেছে, রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি ভবনে আগুন লাগিয়েছে, পুলিশ সদস্যকে ঝুলিয়ে হত্যা করেছে, এসব ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের কেউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।”
এরপর সাংবাদিকদের প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়ে গাড়িতে উঠে চলে যান হারুন অর রশীদ।
ডিবির দায়িত্ব পালনকালে হারুন তার কার্যালয়ে অভিযোগ নিয়ে আসা বিভিন্নজনকে দুপুরে খাওয়ান। সেসব ছবি নিজের ফেইসবুকে শেয়ার করেন, যা নিয়ে বেশ আলোচনায় ছিলেন এ কর্মকর্তা।
এর আগেও পুলিশের বিভিন্ন দায়িত্ব পালনকালে আলোচনায় আসেন হারুন অর রশীদ। পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার থাকাকালে ২০১১ সালে পুলিশের দিকে তেড়ে যাওয়া তৎকালীন বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুককে ধাওয়া দিয়ে বেদম পিটুনির ঘটনায় আলোচিত হন।
পরে ডিএমপির লালবাগ বিভাগে কয়েক বছর দায়িত্ব পালনের পর গাজীপুরের পুলিশ সুপার হন তিনি। সেখানে কয়েক বছর দায়িত্ব পালনের মধ্যে ২০১৮ সালের মে মাসে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় বিএনপি তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তোলে। এরপর ওই বছরের অগাস্টের শুরুতে তাকে ঢাকা মহানগর পুলিশে বদলি করা হয়।
একই বছরের ২ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনের কয়েক দিন আগে হারুনকে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার হিসেবে বদলি করে সরকার।
নারায়ণগঞ্জে ১১ মাসের দায়িত্বে সন্ত্রাসী, মাদক কারবারি, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ‘জিহাদ’ ঘোষণা করেন হারুন। হকার ও অবৈধ দখল উচ্ছেদসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়ে তিনি যেমন প্রশংসিত হন, তেমনি নারায়ণগঞ্জের অনেক প্রভাবশালীর সঙ্গে ‘টক্করে’ গিয়ে নতুন আলোচনার জন্ম দেন।
২০১৯ সালে পারটেক্স গ্রুপের কর্ণধার এম এ হাশেমের ছেলে আমবার গ্রুপের চেয়ারম্যান শওকত আজিজের স্ত্রী ও সন্তানকে আটক করেও আলোচনার জন্ম দেন এ পুলিশ কর্মকর্তা। এরপর তাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে সরিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে আনা হয়েছিল। পরে আবার তাকে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
ডিআইজি হিসেবে ২০২২ সালের ১১ মে পদোন্নতি পাওয়ার পর একই বছর ১৩ জুলাই ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে ঢাকার ডিবির দায়িত্ব পান। এর আগে অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।




























