ব্লগার আসাদ নূরের উপর হামলা ও হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। প্রবাসে নির্বাসিত লেখক আসিফ মহিউদ্দিন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে হামলার বিষয়ে একটি পোস্ট করেন।
আসাদ নূর কট্টর ইসলামের সমালোচনা ও বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদের জন্য বাংলাদেশের ইসলামিস্টদের নিকট আক্রমণের লক্ষ্যবস্ত। বাংলাদেশের মৌলবাদিরা আসাদ নুরের ফাসির দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। সরকার এবং ইসলামিস্টরা তাকে দেশে থাকতে দেয় নি এমনকি তার পাসপোর্ট কেড়ে নেয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
বাংলাদেশে বিগত সময়ে অভিজিৎ রায়, অনন্ত বিজয় দাস, আরেফিন দীপন সহ অসংখ্য মুক্তচিন্তক, ব্লগার, লেখক প্রকাশককে হত্যা করা হয়েছে। নাস্তিক ও ইসলামবিরোধী ফতোয়া দিয়ে তাদের হত্যার জন্য নামের তালিকা প্রকাশ করেছিল ও তাদের হত্যার জন্য ক্যাম্পেইন করেছিল জঙ্গিবাদী, সন্ত্রাসী সংগঠন আনসার আল ইসলাম, হিজবুত তাহরির, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামি ঐক্যজোট এর কর্মীরা। বাংলাদেশের বিরাট সংখ্যক লেখক, মুক্তচিন্তক মৌলবাদীদের হুমকিতে প্রান বাচাতে দেশের বাইরে জার্মানি, সুইডেন, ইউকে , আমেরিকা সহ বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে। বর্তমানেও যারা মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখি করেন তাদের অনেকেই বার বার ইসলামিক মৌলবাদি এমনকি খোদ আওয়ামী লীগ এর বিভিন্ন নেতা কর্মীদের দ্বারা হয়রানি, মামলা হামলার স্বীকার হচ্ছেন।
ব্লগার আসাদ নূরের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার, তাকে পাসপোর্ট ফিরিয়ে দিতে ও তার পরিবারের সদস্যদের হেনস্থা না করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে একাধিক মানবাধিকার সংগঠন৷
রাঙ্গুনিয়ায় বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার ঘটনা নিয়ে জুলাই মাসে একাধিক ভিডিও প্রকাশ করেন ব্লগার আসাদ নূর৷ তখন সেখানকার এক রাজনৈতিক নেতা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে দেশটির বিতর্কিত ‘‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে’’ মামলা করেন৷
নূর তার একটি ভ্লগে দাবি করেছেন যে রাঙ্গুনিয়ার বৌদ্ধ মঠে নির্মাণাধীন একটি বৌদ্ধ মূর্তি ভেঙে ফেলেছে একদল হামলাকারী৷ তারা আওয়ামী লীগের স্থানীয় এমপি এবং সেখানকার বন কর্মকর্তাদের সমর্থন নিয়ে এই হামলা চালিয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি৷
নূর সেই ভিডিও প্রকাশের পর স্থানীয় ইসলামি বিভিন্ন গোষ্ঠী তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে এবং দাবি করে যে তিনি নাকি মুসলমান এবং বৌদ্ধদের মধ্যকার ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা করছেন৷ যদিও রাঙ্গুনিয়ার বঊদ্দ মন্দিরে হামলার তথ্যটি সঠিক ছিল। কিন্ত, পুলিশ সেসময় নূরের বাড়িতে তাকে গ্রেপ্তার করতে একাধিক অভিযান চালায় এবং তাকে না পেয়ে তার পরিবারের সদস্যদের থানায় নিয়ে আটকে রাখে৷
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু বিশেষত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম অবমাননার গুজব রটিয়ে সারা দেশজুড়ে বিভিন্ন সময়ে মন্দির, গ্রাম, বাসা বাড়িতে হামলা ও হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে চলেছে। ২০২১ সালের দুর্গাপুজা চলাকালীন সারা বাংলাদেশে ৩৩ জেলায় একযোগে হামলা ও হতাকাণ্ড সংগঠিত হয় ইসলামিক মৌলবাদীদের হাতে। আসাদ নুর বিভিন্ন সময় সংখ্যালঘু হিন্দু ধর্মাবলম্বী দের উপর ঘটা হামলা গুলোর ব্যাপারে বিচারের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন।
আসাদ নূরের উপর হামলায় তেমনভাবে শারিরিক ক্ষতি করতে পারে নি হামলাকারী। বর্তমানে ব্লগার আসাদ নুর নিরাপদে আছেন। হামলাকারী একজন ইসলাম ধর্মাবলম্বী ও ট্যাক্সিচালক বলে জানিয়েছেন আসাদ নূর।