সরকারি-বেসরকারি যেকোন বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকেন উপাচার্য।
এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি কর্তৃক জৈষ্ঠ অধ্যাপকদের যোগ্য একজনকে এ পদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের তদারক সংস্থা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ১০৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০টিতেই এই পদটি ফাঁকা রয়েছে। বাকি ৭৩ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য রয়েছে। সর্বশেষ গত ২২ আগস্ট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষদের তালিকা প্রকাশ করে ইউজিসি। সংস্থাটির দেয়া তথ্যমতে, বর্তমানে ৩ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। এরমধ্যে ইবাইস ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে, দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লাকে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন দেওয়া হয়নি এবং সরকার কর্তৃক বন্ধ করার পর শর্ত সাপেক্ষে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি কুইন্স ইউনিভার্সিটি।
এছাড়া সাময়িক অনুমোদন পেলেও এখনো শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমতি পায়নি ৮ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার অনুমোদন না পাওয়া সাময়িক অনুমোদনপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মধ্যে রয়েছে- ফতুল্লার রূপায়ন এ কে এম শামসুজ্জোহা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহীর শাহ মাখদুম ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটি, মাইক্রোল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব সায়ের্স এন্ড টেকনোলজি, কিশোরগঞ্জের শেখ হাসিনা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, খুলনার বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অফ সাইন্স এন্ড টেকনোলজি, রংপুরের তিস্তা ইউনিভার্সিটি, ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল ইসলামী ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি বাংলাদেশ এবং কুষ্টিয়ার লালন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত করায় এবং এখনো শিক্ষার্থী ভর্তি করার অনুমোদন না পাওয়াতে এই ১১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য দেওয়ার বিষয়ে কোন আলোচনায় নেই বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন। তবে কার্যক্রম চলমান থাকলেও ২৯ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক শীর্ষ পদটি ফাঁকা রয়েছে।
আইন অনুযায়ী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষ— এই তিন পদে নিয়োগ দিতে একেকটি পদের বিপরীতে তিনজন অধ্যাপকের নাম প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেগুলোর ইউজিসির মাধ্যমে যাচাই করে সরকারের উচ্চপর্যায়ে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হিসেবে রাষ্ট্রপতি একজনকে নিয়োগ দেন। তবে অভিযোগ আছে, উপাচার্য নিয়োগ না হওয়া এসব বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ম না মেনে নিজেরাই ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিয়ে বছরের পর বছর শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চালায়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যোগ্য ব্যক্তিদের প্যানেল সরকারের কাছে না পাঠিয়ে নিজেদের মতো করে একটি প্যানেল পাঠানোর অভিযোগও রয়েছে। প্যানেলে যোগ্য ব্যাক্তি না থাকায় সেটি আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরত আসে। এরপর উপাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়া থমকে যায়। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড এবং মালিকরা তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব দিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে নেয়।
বর্তমানে কার্যক্রম চলমান থাকলেও ২৯ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদটি ফাঁকা। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে- ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি চিটাগাং, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ, দি পিপল’স ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, গ্রীণ ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি এন্ড সায়েন্সেস, প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটি, আশা ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি, বরেন্দ্র ইউনিভার্সিটি, সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি, চিটাগাং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি।
এছাড়াও জার্মান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি, বাংলাদেশ আর্মি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স, এন. পি. আই ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি, ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়, আনোয়ার খান মডার্ণ ইউনিভার্সিটি, বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদটি ফাঁকা রয়েছে।
বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক মো ওমর ফারুখ। তিনি বলেন, কিছু বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পেলেও এখনো একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করেনি। তাছাড়া সরকার কর্তৃক কয়েকটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে বিধায় এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদটি ফাঁকা রয়েছে। ইউজিসির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য না থাকালে সেটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় দেখেন। আমাদের এখানে সংশ্লিষ্ট যেসব দায়িত্ব থাকে আমরা তা সম্পন্ন করি।