রাহবার নির্বাচনে রুহানি সম্প্রদায়কে আরেকটু সতর্ক ও ধৈর্যশীল হতে হবে – আখতারুজ্জামান আজাদ
যত্রতত্র যাকে-তাকে রাহবার (পথপ্রদর্শক) মানা যাবে না, অন্তত কয়েকটা মাস পরখ করে দেখতে হবে। শেখ হাসিনাকে অকথ্য গালিগালাজ করার পর রুহানি পুত্ররা চাঁদপুরের সেফাতউল্লাহকে এ যুগের ‘পাগলা রাহবার’ হিশেবে গ্রহণ করে নিয়েছিলেন। কিন্তু পরক্ষণেই তাদের কপাল পুড়েছে; যখন একই সেফাত খালেদা জিয়াকেও গালাগাল করেছেন, জিয়াউর রহমানের মাজারে শব্দবোমা নিক্ষেপ করেছেন, এমনকি কোরান শরিফের অভূতপূর্ব অবমাননা করেছেন, আবার পরদিনই টুপি পরে দোয়াদরুদ পড়েছেন। তখন রুহানিপক্ষের উপলব্ধি হয়েছে— পাগলের ওপর ভরসা করতে নেই, পাগলকে রাহবার ভাবতে নেই। অবশ্য সেফাতের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়ার একটা উক্তির সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। খালেদার ভাষ্যমতে কেবল পাগল ও শিশুরাই নিরপেক্ষ। সেফাত খালেদার উক্তির যথার্থতা প্রমাণ করে সব পক্ষকে গালাগালের গয়রহ গঙ্গায় চুবিয়েছেন। আল-জাজিরায় ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স ম্যান’ দেখে সাংবাদিক তাসনিম খলিলকে রাহবার মানার পর দেখা গেল তাসনিম নাস্তিক— নাস্তিক তো নাস্তিক, রীতিমতো রংধনু নিশান উড়িয়ে সমকামীদের অধিকারের পক্ষেও সোচ্চার। রুহানি কওম শেষ পর্যন্ত তাসনিমেও হতাশ। আসিফ নজরুলকে দুই-আড়াই দশক ধরে ‘প্রেসিডিয়াম রাহবার’ মানার পর দেখা গেল তিনি যৌবনে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর যুদ্ধাপরাধ নিয়ে প্রলয়ঙ্কর প্রতিবেদন লিখে বসে আছেন, এর ওপর তিনি আবার দাইয়ুসও— তার সাবেক স্ত্রী (রোকেয়া প্রাচী) সিনেমার নায়িকা ছিলেন, তিনি নিজের যুবতী কন্যাকে পর্দা করান না, কন্যাদের বেপর্দা ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফিৎনা সৃষ্টি করেন। রুহানি মিল্লাত ইৎনা ফিৎনাবাজ আসিফেও আশাহত, ভাষাহত, হাসাহত।
বিজয়দিবস পালন করতে না-চাওয়া, জাতীয় পতাকা ওড়াতে না-চাওয়া, বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত না-গাওয়া পৌনে-পাকিস্তানি ক্রিকেটার তানজিম হাসান সাকিবকে রাহবার মানার দিন-তিনেকের মধ্যেই দেখা গেল— কৃতকর্মের জন্য তিনি বিসিবির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। ফলে, তানজিমও বাদ পড়লেন রাহবারশিপের দৌড় থেকে, ঝরে গেল একজন উদীয়মান উদ্বাহু রাহবার। মনে-মগজে ‘ইসলামাবাদ’ লালন করা এই জালালাবাদের তরুণ রাহবার ইমানি জজবা প্রদর্শন থেকে করুণভাবে বিদায় নিয়েছেন জালাল ইউনুসের কাছে ক্ষমা চেয়ে। জালালাবাদ এবং জালাল ইউনুস— তানজিমের দুই আফসোসের নাম। ওদিকে, পুরোনো রাহবার মামুনুল হক রয়েল রিসোর্টের পাঁচশো একে ‘শহিদুল ভাইয়ের ওয়াইফ’-এর ঝর্নাধারায় সিক্ত হতে গিয়ে হাতেনাতে ধৃত হলেন, মাঝখান দিয়ে কিছু মনে না করতে আসল স্ত্রীকে অনুরোধ করলেন, বাজখাঁই গলায় ফ্রি-মিক্সিং-বিরোধী বয়ান দিতে অভ্যস্ত শায়েখ নিজেই ফেঁসে গেলেন ফ্রি মিক্সিং মামলায়। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও হয়ে গেল জেনারগাঁও। এই রিসোর্ট-কেলেঙ্কারিতে শেষ পর্যন্ত আস্ত হেফাজতে ইসলামই ভেস্তে গেল। ধৃত মামুন এখন জীবিত থেকেও মৃত মামুন। প্রকাশ্যে কিছু না বললেও রুহানি পুত্ররা মনে-মনে ঠিকই বলেছেন— শায়েখ, শেষ পর্যন্ত তুমিও!
মসজিদে বিয়ে করার প্রেক্ষিতে দুই অভিজাত কোচিংশিক্ষক আয়মান সাদিক ও মুনজেরিন শহিদকে ‘রাহবার দম্পতি’ মানার পর পরদিনই দেখা গেল— তারা হারাম গানের তালে-তালে নেচে-কুঁদে বিয়ে উদযাপন করছেন, চারপাশে শত-শত বেগানা নরনারী বিশাল ব্লেন্ডারের মধ্যে ঢুকে ‘ফ্রি মিক্সিং’য়ে লিপ্ত রয়েছেন, মেতে আছেন বেশরিয়ত বেলাল্লাপনায়। ফলশ্রুতিতে, এই নবদম্পতি হব-হব করেও শেষতক আর রাহবার হতে পারলেন না, মুনজেরিন শহিদ পরিণত হলেন শহিদ মুনজেরিনে। এক হাজার কোটি টাকা মেরে দেওয়ার অভিযোগে হক ব্যাটারির আদম তমিজি হক আওয়ামি লিগ ত্যাগের ঘোষণা দেওয়ায় এবং আওয়ামি লিগকে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানানোয় রুহানি গোত্র আদমকে তাৎক্ষণিক রাহবার মানল। আদম রাজনীতি ছেড়ে ধর্মকর্মে মন দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় গোত্রটি আরো উজ্জীবিত হলো, কিন্তু বিধি বাম। এই আদম বাবা আদম নন। এই আদম আদমব্যাপারী। বেধড়ক বাটাম খেয়ে আদম দু-এক দিনের মধ্যেই লাইভে গিয়ে ঘোষণা দিলেন তিনি শেখ হাসিনার একজন কর্মী, সবাই যেন আওয়ামি লিগকেই ভোট দেয়। তমিজির বেতমিজি রুহানিদেরকে বিস্মিত করল, বাকরুদ্ধ করল, হাঁকরুদ্ধ করল। অঙ্কুরে বিনষ্ট হলো আরেকটি সম্ভাবনাময় ফুটফুটে রাহবার।
সাবেক ডিশ-ব্যবসায়ী আশরাফুল হোসেন আলম টানা কয়েকটা উপ-নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আলোড়ন তোলার পর কেউ-কেউ মনে করেছিলেন আলমের হাত ধরেই দেশে গণঅভ্যুত্থান ঘটবে। কিন্তু আলম যখনই বললেন— ‘আমি সেভেন পাশ, খালেদা জিয়া এইট পাশ, খালেদা জিয়া আমার চেয়ে মাত্র এক ক্লাস ওপরে’; তখন সে-আশার গুড়েও বেধড়ক বালি ছিটকে পড়ল, অভ্যুত্থান আর হলো না। রুহানি সম্প্রদায় ডাকসুর সাবেক সহ-সভাপতি নুরুল হক নুরের ওপর সবচেয়ে বেশি ভরসা করেছিল, ভেবেছিল— এক নুরই আস্ত উপমহাদেশ উপড়ে ফেলবেন, দক্ষিণ এশিয়ায় খেলাফত প্রতিষ্ঠিত করবেন, কায়েম করবেন বহুল আরাধ্য গজওয়াতুল হিন্দ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেল— সুযোগ পেলেই গলাচিপার এই রাহবার চিপায়চাপায় ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের সাথে বৈঠক করেন, প্রবাসীদের দেওয়া চাঁদার টাকা তছরুপ করেন, নিজের পাঞ্জাবি নিজেই ছিঁড়ে আহত হওয়ার ভান করেন। ফলে, রুহানি সন্তানদের নুরস্বপ্নও পরিণত হলো দূরস্বপ্নে-দুঃস্বপ্নে। রাহবার হিশেবে নুরই রুহানি প্রজন্মকে সর্বোচ্চ হতাশ করেছে। ‘প্রিন্সেস টিনা খান’ সিনেমার জন্য মনিরুজ্জামান মনির হয়তো রুহানি সম্প্রদায়কে ভেবেই লিখেছিলেন— ‘যেই ডালে বান্ধি বাসা, ভাঙে সেই ডাল; আমার এমনই কপাল, হায় রে, এমনই কপাল।’ জসীমউদদীনের ‘কবর’ কবিতার দুটো পঙক্তির সাথেও আলোচ্য সম্প্রদায়টির সুনিপুণ সাযুজ্য পাওয়া যায়— ‘তার পর এই শূন্য জীবনে যত কাটিয়াছি পাড়ি; যেখানে যাহারে জড়ায়ে ধরেছি, সে-ই চলে গেছে ছাড়ি।’
প্যারিসপ্রবাসী যে ভট্টাচার্যটি রুহানি সম্প্রদায়ের বামুন শাখার অস্থায়ী আমির, এক দশক আগেও তিনি অত্যুৎসাহী শাহবাগি ছিলেন; আরেক দশক বাদে ঋতুবতীদের মতো তার যে আবারও মুড সুইং হবে না, আরেক শাহবাগ ঘটলে তিনি যে আবারও শাহবাগি হবেন না কিংবা লালবাগ ঘটলে লালবাগি, সবুজবাগ ঘটলে সবুজবাগি হবেন না— এর নিশ্চয়তা খোদ ইমানুয়েল মাখোঁও দিতে পারবেন না। এক ভট্টাচার্যের মুহুর্মুহু মুড সুইংয়ের কাছে লাখো মাখোঁ নস্যি। শার্লি হেবদোর কার্টুনকাণ্ডের পর বাংলার সমগ্র তৌহিদি জনতা পুরো ফ্রান্সকে বয়কট করেছিল, ফ্রান্সের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নভিন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছিল, জাতীয় পার্টির এক সাংসদ (লিয়াকত হোসেন খোকা) মাখোঁর ভবলীলা সাঙ্গ করার জন্য উলঙ্গ তলোয়ার নিয়ে চিটাগং রোডে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তখন ভট্টাচার্য পড়েছিলেন শাঁখের করাতে। স্রোতের অনুকূলে গিয়ে তিনি তখন জবরদস্ত জজবায় ফ্রান্স বয়কটের ডাক দিতে পারেননি। ফ্রান্সে বসে ফান্সকেই বয়কটের ডাক দিয়ে বসলে ফরাসি সরকার সাঁড়াশি দিয়ে চেপে ধরে তাকে কাবুল, কান্দাহার বা করাচিতে রেখে আসত। মনে রাখতে হবে— ভট্টাচার্য যতই দ্বীনের সেবা করুন না কেন, খাদেমদের শত দাওয়াত সত্ত্বেও তিনি দ্বীন কবুল করবেন না। তিনি জানেন— ‘ভট্টাচার্য’ পদবিই তার প্রধান কাঁচামাল। অমুসলমান হয়েও তৌহিদি জনতার মনোরঞ্জন করছেন— এই হলো তার পুঁজি। ভট্টাচার্য থেকে তিনি ভাট্টি হয়ে গেলে তার বাণিজ্য ওখানেই শেষ। রুহানি সম্প্রদায়কে আরো মনে রাখতে হবে— ভট্টাচার্য একজন দোদুল্যমান রাহবার, বায়ুপরিবর্তন হলেই পায়ু উলটে তিনি ফের শাহবাগে রওয়ানা দিয়ে বসতে পারেন।
রুহানি মিল্লাতের সর্বশেষ রাহবার ফরিদউদ্দিন আহমেদ। শাহ্ জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পতিত উপাচার্য গতকাল বলেছেন যে, তিনি তালেব আনি কালচার নিয়ে খুবই গৌরবান্বিত। তালেব আনের ওপর প্রেমপ্রদর্শনের সাথে-সাথে রুহানি পুত্র-পুত্রীরা বাজারে যাচাই না করে, ‘সোনা কিনিলাম নাকি রুপা কিনিলাম’ খতিয়ে না দেখে ফরিদকে হালের নতুন রাহবার হিশেবে খরিদ করে নিয়েছেন, নিজেদেরকে তার মুরিদ করে নিয়েছেন, জনম-জনমের সুহৃদ করে নিয়েছেন। কিন্তু রুহানি সম্প্রদায়ের মনে রাখতে হবে— মনের কোণায়-কাঞ্চিতে তালেব আন প্রীতি লুকিয়ে থাকলেও দিনের শেষে এই ফরিদ কিন্তু একজন আওয়ামি উপাচার্যই। রাতের শেষে তিনি কিন্তু আওয়ামি লিগের স্বার্থই বাস্তবায়ন করবেন, হয়তো আসন্ন নির্বাচনে নৌকায় ভোট চাওয়ার জন্য নিজে আখালিয়া থেকে রিকশা নিয়ে মাইকিং করতে-করতে চৌহাট্টা-জিন্দাবাজার-আম্বরখানা প্রদক্ষিণ করবেন অথবা জগন্নাথের সাবেক উপাচার্য মিজানুর রহমানের মতো যুবলিগের চেয়ারম্যান বা তাঁতিলিগের সাধারণ সম্পাদক হতে চাইবেন, হতে চাইবেন স্বেচ্ছাসেবক লিগের সহ-সভাপতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক উপাচার্যের নাম আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। ‘আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক’-এর পূর্ণ রূপ ‘আবুল আহসান মোহাম্মদ সামছুল আরেফিন সিদ্দিক’। কিন্তু নিন্দুকেরা বলত— আ আ ম স মানে আমি আওয়ামি মনোনীত সদস্য। সে হিশেবে আওয়ামি লিগের আমলে নিযুক্ত সব উপাচার্যই আ আ ম স। সেক্ষেত্রে ফরিদউদ্দিনও ‘আ আ ম স ফরিদউদ্দিন’।
গুলিস্তানের শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে সিলেটের আখালিয়ায় কড়া ধমক পৌঁছালে ফরিদ গতকালের বক্তব্যের জন্য নাকে খত দিয়ে মাফ চেয়ে আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ‘ফ্রি মিক্সিং ফেস্টিভাল’ আয়োজন করে বসবেন। ফরিদ ততক্ষণ পর্যন্তই কিচিরমিচির করতে পারবেন, আওয়ামি লিগ যতক্ষণ তাকে সেই সুযোগ দেবে। আওয়ামি লিগের কেন্দ্রীয় রাহবার শেখ হাসিনার হুকুম ছাড়া বর্তমান বাংলাদেশে পাখিদেরও কিচিরমিচির করা সম্ভব না, ফরিদউদ্দিনের ভিসিরমিচির দিল্লি দূর অস্ত। শেখ হাসিনার নির্দেশ ছাড়া এই বঙ্গে এখন গাছে ফল ধরে না, মাছে ডিম ছাড়ে না, হাঁসে সাঁতার কাটে না। আওয়ামি লিগ ফরিদের পাখালিয়া দুটো কেটে দিলেই তল্পিতল্পা গুটিয়ে পরমুহূর্তে তাকে আখালিয়া ছাড়তে হবে। চুরুলিয়ার কবি কাজী নজরুল ইসলামের দেওয়া তথ্যমতে— তাজমহলের অন্তরে ‘মমতাজ নারী’, বাহিরে শা-জাহান। অপরদিকে ফরিদউদ্দিনদের বাহিরে দীপুমণি; অন্তরে পরীমণি, প্রিয়ামণি, (ম্যাজিক) মামণি। চেয়ার ধরে রাখার জন্য ফরিদদের পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব। গত বছরের জানুয়ারিতে যখন শাহ্ জালাল বিশ্ববিদ্যালয়-জুড়ে ফরিদবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন হচ্ছিল, তখনও কিন্তু একগুচ্ছ হুজুগে হুজুর ফরিদের পক্ষ নিয়ে ছাত্রদের বিরুদ্ধে তৌহিদি মিছিল করেছিল এই মর্মে— আন্দোলনের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের ‘ফ্রি মিক্সিং’ হচ্ছে৷ বলাই বাহুল্য— আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদেরকে ভড়কে দিতে ফরিদই সেই হুজুরদেরকে পয়সা দিয়ে খরিদ করে মাঠে নামিয়েছিলেন। গদি টিকিয়ে রাখতে ফরিদ তখনও ধর্ম ব্যবহার করেছেন, এখনও করছেন; ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য যেভাবে রাষ্ট্রধর্ম প্রণয়ন করেছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, সেভাবেই ধর্মানুভূতি ব্যবহার করে তখতে তাউস পাকাপোক্ত করলেন হালের গাউস ফরিদউদ্দিন। ফরিদ আর এরশাদে কিন্তু অমিল নেই। অতএব, ফরিদকে রাহবার মানার আগে সাবধান। চর্মহীন ফরিদের এই ধর্মপ্রেম নিছকই সাময়িক। অভিযোগ আছে— মাদ্রাসাছাত্রদেরকে ফরিদ চাকরি দেন না। সামান্য নাড়াচাড়া পড়লেই কিন্তু ফরিদ ফের চোখের পলকে পল্টি নেবেন, তখন কিন্তু কেস হেরে রুহানি মিল্লাতকে চিল্লাতে-চিল্লাতে চিল্লায় যেতে হবে। বাঁচতে হলে ফরিদকে আস্তে নাড়াতে হবে।
দশবছরের এক ছেলে একবার ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে আদালতের কাঠগড়ায় উঠল। আসামিপক্ষের নারী আইনজীবী সম্ভাব্য সব রকমের সাফাই গেয়ে বিচারককে উদ্দেশ করে বললেন— ‘মাত্র দশবছরের একটা বাচ্চাছেলের কোনো যৌন তাড়নাই নেই; এই বয়সের কোনো ছেলের পক্ষে ধর্ষণ দূরে থাক, সঙ্গম করাও অসম্ভব, ওর উত্থানই হবে না; পূর্বশত্রুতার জের ধরে এই ছেলের বাবার শত্রুরা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ওকে এই মামলায় ফাঁসিয়েছে।’ বিচারককে নীরব-নির্বিকার দেখে অতি-উত্তেজিত হয়ে আসামির পাতলুন খুলে পুংদণ্ডটি হাতে ধরে নাড়াতে-নাড়াতে ঠোঁট বাঁকিয়ে উকিলটি বললেন— ‘আপনিই বলুন, ইয়োর অনার! এত ছোট্ট একটা ময়না দিয়ে ধর্ষণ করা সম্ভব? আমরা কেন এত বিবেকহীন হয়ে পড়েছি? কেন কোমলমতি একটা শিশুকে আমাদের সমাজ কাঠগড়ায় এনে দাঁড় করাল? আমরা কি পেরেছি শিশুদের জন্য একটা বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তুলতে? আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলুম?’ নিশপিশরত বাচ্চাটা মহিলা উকিলের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল— ‘একটু আস্তে নাড়েন, আপা। বেশি জোরে নাড়লে কিন্তু কেসে হেরে যাবেন।’
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩
আখতারুজ্জামান আজাদ