১৪ ই ডিসেম্বরে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নাম জেনে নিন

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর দুঃশাসনের সময় আমাদের অনেক লেখক , সাহিত্যিক , কবি , দার্শনিক  , চিকিৎসক , প্রকৌশলী , শিক্ষক , শিল্পী , সাংবাদিক , গবেষক সরকারি এবং বেসরকারি কর্মচারী , রাজনৈতিক সমাজসেবী , চলচ্চিত্র , নাটক ও সংগীতের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা এর সাথে সম্পৃক্ত যেকোনো ব্যক্তি ছাড়াও অনেকে ্স্বাধীনতার পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ  অবদান রেখেছিলেন । বুদ্ধিজীবী গণহত্যায় মুল ভুমিকা পালন করে আল বদর আর আল শামস বাহিনী, যারা বর্তমানে জামাতে ইসলামের ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্র শিবির নামে পরিচিত। নিচে ১৪ ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নাম পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা হলো-

১৪ ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নাম

১৯৭১ সালে তৎকালীন সরকার ৭0 জন বুদ্ধিজীবীর একটি তালিকা করেছিল । পরে ১৫২ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর ডাকটিকেট প্রকাশ করেছিল বাংলাদেশ ডাক বিভাগ । এই তালিকার ওপর ভিত্তি করে সরকার শহীদ বুদ্ধিজীবীদের একটি তালিকা তৈরি করেছে । বাংলা একাডেমি প্রণীত শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ গবেষণা গ্রন্থে আরো বুদ্ধিজীবীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । এদের মধ্যে বিখ্যাত মনীষীদের নামের একটি তালিকা নিচে বর্ণনা করা হলো –

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের নামের তালিকা

  • ডক্টর মুনীর চৌধুরী (বাংলা সাহিত্য ) ,
  • ডঃ জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা (ইংরেজি সাহিত্য ),
  • মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী (বাংলা সাহিত্য) ,
  • ডক্টর গোবিন্দ চন্দ্র দেব (দর্শনশাস্ত্র ),
  • ডঃ আনোয়ার পাশা ( বাংলা সাহিত্য),
  • ডঃ  আবুল খায়ের ( ইতিহাস ) ,
  • ডক্টর সিরাজুল হক খান (শিক্ষা ),
  • হুমায়ুন কোবির (ইংরেজি সাহিত্য),
  • ডঃ   রাশেদুল হাসান (ইংরেজি সাহিত্য ),
  • অনুদ্বৈপায়ন  ভট্টাচার্য (ফলিত পদার্থবিদ্যা),
  • এম এ সাদেক (শিক্ষা) ,
  • সাজেদুল হাসান (পদার্থবিজ্ঞান),
  • ফজলুর রহমান খান (মৃত্তিকা বিজ্ঞান) ,
  • এন এম মনিরুজ্জামান (পরিসংখ্যান) ,
  • এ মুক্তাদির (ভূবিদ্যা ),
  • সরাফত আলী (গণিত  ) ,
  • এ আর কে খাদেম (পদার্থবিদ্যা) ,
  • এম সাদাত আলী (শিক্ষা) ,
  • রাশিদুল হাসান (ইংরেজি)
  • এম মর্তুজা (চিকিৎসক)
  • সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য (ইতিহাস )
  • গিয়াসউদ্দিন আহমেদ (ইতিহাস )

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের নামের তালিকা

  • ডঃ শ্রী  সুখরঞ্জন সমাদ্দার ( সংস্কৃত ) ,
  • মীর আব্দুল কাইয়ুম  (মনোবিজ্ঞান) ।
  • ডঃহাবিবুর রহমান (গণিত বিভাগ ) ,

চিকিৎসকদের নামের তালিকা

  • ডাক্তার আজহারুল হক (সহকারী সার্জন ) ,
  • ডাক্তার মোঃ শফি (দন্ত চিকিৎসক ) ।
  • অধ্যাপক ডাক্তার মোঃ ফজলে রাব্বী (হূদরোগ বিশেষজ্ঞ) ,
  • অধ্যাপক ডাক্তার আলীম চৌধুরীর (চক্ষু বিশেষজ্ঞ),
  • অধ্যাপক ডাক্তার সামসুদ্দিন আহমেদ ,
  • অধ্যাপক ডাক্তার আব্দুল আলীম চৌধুরী ,
  • ডাক্তার মফিজ উদ্দিন খান ,
  • ডাক্তার জাহাঙ্গীর ,
  • ডাক্তার নুরুল ইমাম ,
  • ডাক্তার এসকে লালা ,
  • ডাক্তার হেমচন্দ্র বসাক ,
  • ডাক্তার ওবায়দুল হক ,
  • ডাক্তার হুমায়ুন কবীর ,
  •  ডাক্তার আজহারুল হক ,
  • ডাক্তার সোলায়মান খান ,
  • ডাক্তার আয়েশা বদেরা  চৌধুরী ,
  • ডাক্তার কসির  উদ্দিন তালুকদার ,
  • ডাক্তার মনসুর আলী ,
  • ডাক্তার মোহাম্মদ মোর্তজা ,
  • ডাক্তার আসাদুল হক ,
  • ডাক্তার মোসাব্বের আহমেদ  ,

অন্যান্যদের নামের তালিকা

  • ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত (রাজনীতিবিদ ) ,
  • নূতন চন্দ্র সিংহ (সমাজসেবক , আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক) ।
  • রণদা প্রসাদ সাহা (সমাজসেবক এবং দানবীর) ,
  • যোগেশচন্দ্র ঘোষ (শিক্ষাবিদ আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক) ,
  • জহির রায়হান (লেখক , চলচ্চিত্রকার ) ,
  • মেহেরুন্নেসা (কবি ) ,
  • ডক্টর আবুল কালাম আজাদ (শিক্ষাবিদ গণিতজ্ঞ ),
  • নাজমুল হক সরকার (আইনজীবী) ,
  • শহীদুল্লা কায়সার (সাংবাদিক ) ,
  • নিজাম উদ্দিন আহমেদ (সাংবাদিক ),
  • সেলিনা পারভীন (সাংবাদিক ) ,
  • সিরাজুদ্দীন হোসেন (সাংবাদিক) ,
  • আ ন ম গোলাম মোস্তফা (সাংবাদিক ) ,
  • আলতাফ মাহমুদ (গীতিকার ও সুরকার ) ,

কতজন বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়েছিল

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই পাকিস্তানি বাহিনী ও স্বাধীনতাবিরোধীরা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা শুরু করে। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাকে মেরুদণ্ডহীন করে দেওয়া অর্থাৎ মেধাশূন্য করে দেওয়া আর এই পরিকল্পনা মোতাবেক পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশের মোট বিশ ২০ হাজার বুদ্ধিজীবীকে হত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। আর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের হত্যার প্রধান ছিলেন পাকিস্তানী বাহিনীর মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। এর দায়িত্ব দেয়া হয় আল বদর আর আল শামস বাহিনীকে, যারা বর্তমানে জামাতে ইসলামের ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্র শিবির  নামে পরিচিত।
তিনি বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার জন্য ৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশে নতুন করে কারফিউ জারি করেন এবং ১০ ডিসেম্বর পরিকল্পনা করেন কোথায় কিভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হবে এবং এর বাস্তবায়ন করেন ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর। আর এই সময় অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলার ১১১১ জন বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছিল। তবে সবচেয়ে বেশি হত্যা করা হয়েছিল রাজধানী ঢাকায় এবং এর সংখ্যা ছিল ১৪৯ জন।
তবে ১৯৭২ সালে আন্তর্জাতিক সংবাদ সময়িকি নিউজ উইকের সাংবাদিক নিকোলাস টমালিনের রচিত নিবন্ধ যা জাতীয়ভাবে প্রকাশিত একটি সংবাদে প্রকাশ করা হয় যে, মুক্তিযুদ্ধের সময় অর্থাৎ ১৯৭১ সালে মোট ১০৭০ জন বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়েছিল। তবে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যাদের হত্যা করা হয়েছে এবং যারা নিখোঁজ রয়েছেন তারা সবাই বুদ্ধিজীবী। আর বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবীর প্রধান ছিলেন জহির রায়হান এবং তিনিও ১৯৭২ সালের ৩০ শে জানুয়ারি নিখোঁজ হন।

শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনাকারী

যারা দৈহিক শ্রমের পরিবর্তে বুদ্ধি ভিত্তিক শ্রম দিয়ে বাংলাকে মুক্তিযুদ্ধের সময় সার্বিক সহযোগিতা করেছিলেন তাদেরকে বলা হয় বুদ্ধিজীবী। অর্থাৎ বুদ্ধিজীবী বলতে আমরা তাদের বুঝি যারা তাদের বুদ্ধি দিয়ে, লেখনীর মাধ্যমে বাংলাকে বিজয়ী করতে সার্বিক সহযোগিতা করেছিলেন। কিন্তু পাকিস্তান সরকার যখন বুঝতে পারেন যে তাদের পরাজয় নিশ্চিত তখন তারা পরিকল্পনা করেন বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করতে হবে। যার কারণে তারা নিখুঁতভাবে একটি পরিকল্পনা করেন
এবং ২0 হাজর  বুদ্ধিজীবীর একটি তালিকা তৈরি করেন এবং তারা পরিকল্পনা করেন যে বুদ্ধিজীবীদের সরকারি বাসভবনে ডেকে তাদের হত্যা করা হবে। কিন্তু পরবর্তীতে তারা তাদের পরিকল্পনা পরিবর্তন করেন এবং সেই দিন তারা অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর তারা ১১১১ জন বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেন। আর এই বুদ্ধিজীবীদের হত্যার প্রধান পরিকল্পনাকারী ছিলেন পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী।
এবং তাকে সহযোগিতা করেছিল ব্রি জে আসলাম, কর্নেল তাজ, ক্যাপ্টেন তারেক, কর্নেল তাহের, ডঃ মোহর আলী, উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর সাজ্জাদ হোসায়েন, আল বদর এবিএম খালেক মজুমদার চৌধুরী, মঈন উদ্দিন এবং আসাদুজ্জামান খান। হত্যাকান্ডের দায়িত্ব ছিল আল বদর আর আল শামস বাহিনীক, যারা বর্তমানে জামাতে ইসলামের ছাত্র সংগঠন শিবির  নামে পরিচিত।আর এদের পরিকল্পনা মোতাবেক ১৪ই ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল।

শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হলেও বাংলাদেশের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সঠিক সংখ্যা জানা নেই । সরকার স্বাধীনতাযুদ্ধের ৫0 বছর পরে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের একটি তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে । বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১১১১ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর নামের তালিকা চূড়ান্ত করেছে ১৯৭২ সাল থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নামের তালিকা করা হলেও এখন পর্যন্ত তারা সরকারি ভুক্ত হয়নি । তবে আশা করা যায় এখন যে ১১১১ জনের প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে তা গেজেটভুক্ত করা হবে ।

বাংলাপিডিয়া শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তথ্য প্রকাশ করেছে । তাদের মতে সাংবাদিক ১৩ জন,  চিকিৎসক ৪৯  জন , আইনজীবী  ৪২  জন , এবং অন্যান্য ১৬  জন , শিক্ষাবিদ ৯৯১ জন ,  শিক্ষাবিদ রয়েছেন এর মধ্যে ৯৬৮ জন , এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ২১ জন , শহীদ শিক্ষাবিদ ৯৮৯ জন ।

শহীদ বুদ্ধিজীবী কোন বিভাগে কতজন

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী কে সামনে রেখে এক বিশেষ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন তালিকা প্রকাশ করেন এই তালিকায় কোন বিভাগে কতজন রয়েছে তা তিনি প্রকাশ করেছেন এর মধ্যে

  • রাজশাহী বিভাগে ১৩ হাজার ৮৮৯ জন
  • বরিশাল বিভাগে ১২ হাজার ৫৬৩ জন
  • ঢাকা বিভাগের৩৭ হাজার  ৪৮৭ জন
  • চট্টগ্রাম বিভাগে ৩০ হাজার  ৫৩ জন
  • ময়মনসিংহ বিভাগে ১0 হাজার ৫৮৮ জন
  • খুলনা বিভাগে ১৭  হাজার ৬৩০ জন
  • রংপুর বিভাগে ১৫  হাজার  ১৫৮ জন
  • সিলেট বিভাগে ১০  হাজার  ২৬৪  জন

 

পরিশেষে

১৯৭১ সালের ১৪ ই ডিসেম্বর বাংলার যে বুদ্ধিজীবী বীর সন্তান তাদের মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়ে ছিলেন । আমাদের নিজ বাঙালি ভাই আল বদর আর আল শামস বাহিনী, যারা বর্তমানে জামাতে ইসলামের ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্র শিবির নামে পরিচিত, তাদের হাতেই মুলত অধিকাংশ বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডগুলো ঘটে। ৫0 বছর হলেও তাদের প্রকৃত সংখ্যা জানা যায়নি । তবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী কে সামনে রেখে এই তালিকা প্রকাশ করেছেন । সেখানে তিনি কোন বিভাগে কতজন শহীদ বুদ্ধিজীবী রয়েছেন তা উল্লেখ করেছেন ।

তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া

Related Posts