বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘু নির্যাতন বেড়ে চলেছে: হিন্দু মহাজোট

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ভাঙচুর, হিন্দু সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর তেলেগু কলোনির মানুষদের উচ্ছেদ চেষ্টার প্রতিবাদ জানিয়েছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতারা। তাঁরা বলেছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর যে অত্যাচার চলছে, তা থেকে মুক্তি পাচ্ছি না। দিন দিন তা বেড়ে চলেছে।

আজ শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের এক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা এসব কথা বলেন। গত ৫ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় তিনটি ইউনিয়নে মধ্য রাতে একসঙ্গে পাঁচটি মন্দির ও ১৪টি প্রতিমা ভাঙচুরের প্রতিবাদে এই সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট। এই হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের আওতায় বিচারের দাবি করা হয় সমাবেশ থেকে।

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সভাপতি প্রভাস চন্দ্র রায় বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর যে অত্যাচার চলছে, তা থেকে এখনো মুক্তি পাচ্ছি না। দিন দিন তা বেড়ে চলেছে। হিন্দুদের ওপর বিভিন্ন অত্যাচার হচ্ছে, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

দেশে হিন্দুসহ ধর্মীয় ও জাতিগতভাবে সংখ্যায় কম মানুষদের সংখ্যালঘু না ভাবার কথা প্রায়ই বলেন রাজনৈতিক নেতারা। সেই প্রসঙ্গে প্রভাস চন্দ্র রায় বলেন, ‘ভাঙচুর শুধু সংখ্যালঘুদের ওপরই দেখতে পাচ্ছি। সংখ্যাগুরুদের ওপর তো হচ্ছে না। আমরা সংখ্যালঘু ভাবতে চাই না, আপনারাই তো ভাবাচ্ছেন।’ এখন পর্যন্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের কোনো ঘটনার বিচার না হওয়ার সমালোচনাও করেন তিনি।

এই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ঢাকার যাত্রাবাড়ীর তেলেগু কলোনির পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। তাঁদের অভিযোগ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে আজ শুক্র ও আগামীকাল শনিবারের মধ্যে তাঁদের জায়গা খালি করে দিতে বলেছে। আগামী রোববার সিটি করপোরেশন সেখানে উচ্ছেদ অভিযান চালাবে।

সভায় উপস্থিত হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ বলেন, গতকাল তেলেগু কলোনীতে গিয়েছিলাম। সেখানে ১২০০ তেলেগু সম্প্রদায়ের লোক থাকেন। তাঁদের জীবন–আচার, চলাফেরা, খাওয়াদাওয়া, সংস্কৃতি সম্পূর্ণ আলাদা। আমাদের লজ্জা হওয়া উচিত যে তাঁদের পাশে বসি না। পাশে থাকি না। তাঁদের ঘের দিয়ে আলাদা করে রাখা হয়েছে। আমাদের (সিটি করপোরেশনের) নজর সেখানেও যাবে? সারা ঢাকা শহর তো গ্রাস করেছি।’

কাজল দেবনাথ বলেন, আজকে যদি তাঁরা কাজ বন্ধ করে দেয় ঢাকা শহরের কারও বাড়ি পরিষ্কার হবে না। আমরা ওখানে বসে থাকব। আমাদের শরীরের ওপর দিয়ে বুলডোজার যাবে। তারপরে আপনি (ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র) ওখানে বিল্ডিং করেন।

সেখানে সংখ্যালঘু হিন্দু তেলেগু সম্প্রদায়ের প্রসাদ দাস বলেন, ‘আমাদের দুই দিনের সময় দিয়ে চলে যেতে বলছে। তা ছাড়া আমাদের কেউ বাসা ভাড়া দেয় না। এত তাড়াতাড়ি আমরা কোথায় যাব?’ বাসস্থানের ব্যবস্থা করে তাঁদের উচ্ছেদের দাবি জানান প্রসাদ।

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীর হামলা প্রসঙ্গে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ বলেন, এ ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলা, সংখ্যালঘু নির্যাতন মেনে নিতে পারি না। আগামী দিনগুলোয় এ ধরনের হামলা চললে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলব। তেলেগু সম্প্রদায়ের মানুষদের উচ্ছেদের চেষ্টা করা হলে সেখানেও আন্দোলন গড়ে তোলার কথা জানান তিনি।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী মহাসচিব ও মুখপাত্র পলাশ কান্তি দে।

Related Posts