রোজা ইসলামের পাচটা বিশেষ নিয়মের একটি। প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম নারী-পুরুষের জন্য রমজানের রোজা( Roja ) রাখা ফরজ। এরসাথে, রোজার নিয়তও ( Rojar Niot ) জরুরি। কালিমা, নামাজের পরই এর অবস্থান। কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে ঈমানদারগণ, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেনো তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পারো। (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৩)
জানুন রোজার নিয়ত Rojar Niot করা কি ফরজ?
রোজা পালনে সাহরি ও ইফতার গুরুত্বপূর্ণ। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, প্রতিটি আমলের প্রতিদান নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ নিয়তবিহীন কোনো আমল আল্লাহর কাছে কবুল হবে না, তা দ্বারা দায়িত্ব থেকে নিষ্কৃতি মিলবে না। তাই প্রতিটি আমল শুদ্ধ হওয়ার পূর্বশর্ত নিয়ত। অন্য সব ইবাদতের মতো রোজার জন্যও নিয়ত করা ফরজ। রমজান মাসের প্রতিটি রোজা যেহেতু পৃথক পৃথক একেকটি আমল সেহেতু রমজানের প্রতিদিনের রোজার জন্যও পৃথক পৃথক নিয়ত শর্ত।
তবে এই ক্ষেত্রে রোজা রাখার উদ্দেশ্যে ঘুম থেকে ওঠা ও সাহরি খাওয়াটাই রোজার নিয়তের অন্তর্ভুক্ত। বস্তুত মনের ইচ্ছাই হলো- নিয়ত। নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা জরুরি নয়। তাই কেউ মুখে নিয়ত না করলেও তার রোজাগুলো আদায় হয়ে যাবে। তবে মুখে নিয়ত করা উত্তম। (সূত্র : আল-বাহরুর রায়েক : ২/৪৫২; আল-জাওহারুতুন নাইয়্যিরাহ : ১/১৭৬; রাদ্দুল মুহতার : ৩/৩৩৯, ৩৪১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/১৯৫, ফতোয়াতে শামি : খণ্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ৩৪৫)
রোজার নিয়ত কবে করতে হয়?
রমজানের রোজার নিয়ত করার শুরুর সময় হলো আগের দিনের সূর্যাস্ত। অর্থাৎ রোববারের রোজার নিয়ত করা যাবে শনিবারের সূর্যাস্তের পর থেকে। শনিবারের সূর্যাস্তের পূর্বের নিয়ত রোববারের রোজার জন্য যথেষ্ট হবে না।
আর রমজানের রোজার নিয়ত করার শেষ সময় হলো দিনের মধ্যভাগ। অর্থাৎ সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়কে সমান দু’ভাগ করলে প্রথম ভাগ শেষ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত নিয়ত করার সুযোগ থাকে। সুবহে সাদেকের সময় যদি হয় ৩টা ৫০ মিনিট আর সূর্যাস্তের সময় যদি হয় ৬টা ৪০ মিনিট তাহলে বেলা ১১টা ১৫ মিনিট হলো সে দিনের রোজার নিয়তের শেষ সময়। সুবহে সাদেক থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত যদি রোজা ভাঙার কোনো কারণ পাওয়া না যায় তাহলে বেলা ১১টায় রোজার নিয়ত করলেও রোজা হবে। তবে সুবহে সাদেকের পূর্বেই নিয়ত করা উত্তম।
রোজার নিয়ত বাংলায় – Rojar Niot Bangla
ফরজ বা নফল রোজার নিয়ত, Rojar Niot আরবিতে হওয়া জরুরি নয়। যেকোনো ভাষায় নিয়ত করা যায়। নিয়ত এভাবে করা যায়— আমি আজ রোজা রাখার নিয়ত করলাম। (জাওয়াহিরুল ফিকাহ : খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৩৭৮)
রোজার আরবি নিয়ত
বাংলাদেশে রোজার একটি আরবি নিয়ত প্রসিদ্ধ— যেটা মানুষ মুখে পড়ে থাকেন। তবে এটি হাদিস ও ফিকাহের কোনো কিতাবে বর্ণিত হয়নি। তবে কেউ চাইলে পড়তে পারেন। (তবে জেনে রাখা উচিত যে, নিয়ত পড়ার চেয়ে নিয়ত করা গুরুত্বপূর্ণ।)
রোজার আরবি নিয়ত
نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم
রোজার নিয়তের বাংলা উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম, মিন শাহরি রমাদানাল মুবারাক; ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু, ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়্যত) করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোযা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।
নফল রোজার নিয়ত ( Nofol Rojar Niot )
সাধারণ নফল রোজার নিয়ত রাত থেকে করা শর্ত নয়; বরং দিনের যে কোন সময়ে কেউ যদি নিয়ত করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা পূর্ণ করে সেটা জায়েয হবে। তবে শর্ত হচ্ছে ফজর শুরু হওয়ার পর থেকে রোজা ভঙ্গকারী কোন কিছুতে লিপ্ত না হওয়া।আর সুনির্দিষ্ট নফল রোজার নিয়ত রাত থেকে (ফজরের পূর্ব) করা শর্ত।
শাইখ উছাইমীনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল,
শাওয়াল মাসের ছয় রোজা ও আরাফার দিনের রোজার হুকুম কি ফরজ রোজার মত অর্থাৎ এ রোজাগুলোর জন্য কি রাত থেকে নিয়ত করা শর্ত? নাকি এ রোজাগুলোর হুকুম নফল রোজার হুকুমের মত যে কোন লোকের জন্য দিনের মধ্যভাগ থেকেও রোজার নিয়ত করা জায়েয? যে ব্যক্তি দিনের মধ্যভাগ থেকে রোজা রাখার নিয়ত করেছে সে কি ঐ ব্যক্তির সমপরিমাণ সওয়াব পাবে যে ব্যক্তি সেহেরী খেয়ে দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রোজা পালন করেছে।
উত্তরে তিনি বলেন, হ্যাঁ; নফল রোজার ক্ষেত্রে দিনের বেলায় নিয়ত করলেও জায়েয হবে। এ ক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে- নিয়ত করার আগে রোজা ভঙ্গকারী কোন কিছুতে লিপ্ত হতে পারবে না। যেমন- কোন লোক যদি ফজরের পর খাওয়াদাওয়া করে ফেলে এরপর দিনের বেলায় রোজা রাখার নিয়ত করে তাকে আমরা বলব: আপনার রোজা শুদ্ধ নয়। কারণ তিনি আহার করেছেন।
তবে তিনি যদি ফজর থেকে না খেয়ে থাকেন এবং অন্য কোন রোজা ভঙ্গকারী বিষয়ে লিপ্ত না হন এরপর দিনের বেলায় রোজা রাখার নিয়ত করেন এবং সে রোজাটি নফল রোজা হয় তাহলে আমরা বলব: এটি জায়েয। কারণ এ ধরণের রোজার অনুমোদন হাদিসে এসেছে।
কাজা রোজার নিয়ত ( Rojar Niot )
কখনো যদি ওধিক রমজানের রোজা কাজা হয়ে যায় তাহলে কাজা আদাইয়ের সময় কোন রমজানের রোজার কাজা আদায় করছে এটা নির্দিষ্ট করা জরুরি। তবে যদি কাজা রোজার সংখ্যা অনেক বেশি হয় এবং তা নির্দিষ্ট করা কঠিন হয় তাহলে -জীবনের সর্বপ্রথম কাজা রোজা রাখলাম- এভাবেও নিয়ত করতে পারবে। -(আল আশবাহ ওয়ান নাযায়ির : ১/১১৫)