জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করতে আগামী ২৮ নভেম্বর থেকে মাঠে নামছে ২ হাজার ৫০০-এর মতো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়োজিত করতে এরই মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে ইসি নির্দেশনা পাঠিয়েছে।
সোমবার (২০ নভেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসির উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান।
ইসির ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে গত ১৫ নভেম্বর সময়সূচি ঘোষণা করা হয়েছে। মোবাইল কোর্ট আইন-২০০৯-এর আওতায় আচরণবিধি প্রতিপালনে প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকায় প্রয়োজনীয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করার জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ লক্ষ্যে ৩০০ নির্বাচনী এলাকায় ২৮ নভেম্বর থেকে আগামী ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা প্রয়োজন।
এ ক্ষেত্রে প্রতি তিনটি ইউনিয়নের জন্য একজন, দুর্গম (পার্বত্য এলাকাসহ) ও দূরবর্তী প্রতি দুটি ইউনিয়নের জন্য একজন; প্রতি পৌরসভার জন্য তিনজন, বড় পৌরসভার ক্ষেত্রে চারজন; সিটি করপোরেশনের প্রতি চার থেকে পাঁচটি সাধারণ ওয়ার্ডের জন্য একজন, ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় সর্বোচ্চ প্রতি তিন ওয়ার্ডের জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের সিদ্ধান্ত দিয়েছে কমিশন।
এ লক্ষ্যে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ছাড়া সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা থানা বা জোন বা এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে। যেসব উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মরত নেই, সেসব উপজেলায়, বিভাগ বা জেলা পর্যায়ে কর্মরত প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে অথবা অন্য কোনো দপ্তর বা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেওয়া যাবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেটরা বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে সমন্বয় করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন। ইসি কর্মকর্তারা জানান, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনগুলোর ওয়ার্ড বিবেচনায় ২ হাজার ৬০০-এর বেশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হবে।
ইসি সূত্র জানায়, প্রচার বন্ধ হওয়ার পর থেকে ভোট পর্যন্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তাদের পাশাপাশি মাঠে থাকবে প্রায় হাজারখানেক বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট। সংসদ নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিতে ৬ দিনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হবে। তবে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হলে দিনের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সঙ্গে ইসি গতকাল বিকেলে বৈঠক করেছে। তাতে কোন বাহিনীর কত সংখ্যক সদস্য কত দিনের জন্য মোতায়েন করা হবে সে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আনসার মোতায়েন থাকবে ভোটের আগে-পরে মোট ৬ দিন। আর পুলিশ মোতায়েন থাকবে ৫ দিন। অন্যান্য বাহিনীও একই সময়ের জন্য নিয়োজিত হতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য এবার সাড়ে ৭ লাখ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। এরই মধ্যে বাহিনীগুলো মোট ২ হাজার ৭১ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে। সবচেয়ে বেশি টাকা চেয়েছে পুলিশ। বাহিনীটি চাহিদা দিয়েছে ৪৩০ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আনসার বাহিনী চেয়েছে ৩৬৬ কোটি ১২ লাখ টাকা। বিজিবি ১৪৫ কোটি ৮৭ লাখ, র্যাব ৫০ কোটি ৬৩ লাখ, কোস্টগার্ড ৭৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা চেয়েছে। সংসদ নির্বাচনে এবার বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সশস্ত্র বাহিনীর ১ লাখ ২০ হাজারের সদস্যকে ১০ দিনের জন্য এবং অন্যান্য বাহিনীর ৭ লাখের মতো সদস্যকে ৬ থেকে ১১ দিনের জন্য মোতায়েন করা হয়েছিল। সে সময় ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৫৬৫ কোটি টাকা।